দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের পথে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট।
পাবনার চাটমোহরে মাথা জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেওয়া জমজ শিশু রাবেয়া-রোকাইয়ার মাথা আলাদা করতে অস্ত্রোপচারের প্রথম ধাপ হিসেবে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে মঙ্গলবার।
হাঙ্গেরি থেকে আসা দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত ১৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলবে।
ওই শিশু দুটির চিকিৎসার সব দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার ঢামেক হাসপতালের বার্ন ইউনিটের কনফারেন্স রুমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. সামন্তলাল সেন, হাঙ্গেরির দুই চিকিৎসক ডা. অ্যান্ড্রোস সুকে এবং ডা. স্টিফেন হিউডেকসহ মেডিকেল বোর্ডের অন্য সদস্যরা।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে চিকিৎসকরা রাবেয়া-রোকাইয়ার বাবা রফিকুল ইসলাম এবং তাদের মা তাসলিমা খাতুনের সঙ্গে অস্ত্রোপচারের ঝুঁকিসহ সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনায় বসেন।
চিকিৎসা পদ্ধতিতে সম্পর্কে বলতে গিয়ে হাঙ্গেরির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অ্যান্ডোস সুকে সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের অস্ত্রোপচার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। শতকরা ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে তা সফল না হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে আমরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করবো না।
অস্ত্রোপচারের আগে মূলত এনজিওগ্রামসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে যে, শিশু দুটির মাথা কীভাবে জোড়া লেগে আছে এবং কী উপায়ে তা আলাদা করা হবে।
সেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে তাদের অস্ত্রোপচার কবে করা হবে।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এমন জটিল অস্ত্রোপচার হলেও বিদেশী চিকিৎসক দুজন নিউরো-সার্জারি বিষয়ে বিশ্বখ্যাত। এ বিষয়ে তাদের ৩০ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে শিশু দুটির চিকিৎসা পরিচালনা হচ্ছে উল্লেখ করে ডা. সেন বলেন, আমি যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে শিশু দুটির ব্যাপারে কথা বলি, তখন তিনি আমাকে বলেছেন, “ওদের চিকিৎসার জন্য যা যা করা দরকার তা করতে।”
প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে বিদেশের পরিবর্তে দেশেই শিশু দুটির চিকিৎসা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চান ওদের চিকিৎসা যেন দেশেই হয়। এ জন্য আমরা অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন জিনিসপত্র বাইরে থেকে নিয়ে এসেছি। যাতে কোনো কিছুর ঘাটতি না থাকে। দেশেই বিশ্বমানের অস্ত্রোপচার করা যায়।
চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শিশু দুটির মা-বাবা তাদের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
পাবনা জেলার চাটমোহরের ১৮ মাস বয়সী দুই শিশু রাবেয়া-রোকাইয়া। জন্মের পর থেকেই তাদের চিকিৎসা চলছে। তবে কেউ তাদেরকে আলাদা করার ভরসা দেননি। শিশু দুটিকে নিয়ে তাদের স্কুল শিক্ষক মা-বাবা হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে বার বার ফিরে গেছেন।
এরইমধ্যে শিশুদের বাবা রফিকুল ইসলাম জানতে পারেন ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আলাদা হওয়া শিশু তোফা ও তহুরার চিকিৎসার খবর। এ খবরে তিনি আশার আলো দেখতে পান।
পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের সহায়তায় গত ২০ নভেম্বর ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় শিশু দুটিকে।