জেএসসি এবং জেডিসি পরীক্ষার মানবন্টনে শিক্ষার্থীরা বাড়তি চাপ থেকে মুক্ত থাকবে বলে মনে করছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা।
স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার চাপ কমাতে জেএসসি এবং জেডিসি পরীক্ষার মানবন্টনে পরিবর্তন এনেছে এনসিটিবি।
চলতি বছরে জেএসসি পরীক্ষার্থীদের বাংলা এবং ইংরেজি বিষয়ে আলাদা করে ১৫০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে না। দুই বিষয়ে একটি করে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। এছাড়া চতুর্থ বা ঐচ্ছিক বিষয়ের পরীক্ষা এখন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই মূল্যায়ন করবে।
অর্থাৎ ২০১৭ সালে মোট ৮৫০ নম্বরে জেএসসি পরীক্ষা হলেও এবছরের পরীক্ষা হবে ৬৫০ নম্বরে। জেডিসিতেও সমপরিমাণ নম্বর কমেছে। এবছর জেডিসি পরীক্ষা হবে ৮৫০ নম্বরে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ছাত্রছাত্রী কাঁধ থেকে পরীক্ষার বোঝা কমানোর জন্য আমাদের ওপর প্রধানমন্ত্রীর একটি নির্দেশনা ছিলো। এই নির্দেশনা থেকে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা কমানো হয়েছে, মানবন্টনে পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তনও এসেছে। আমি মনে করি এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপটা অনেক কমে যাবে।
বছরের মাঝামাঝিতে মানবন্টন ও পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন: বছরের মাঝখানে এই সিদ্ধান্তে বরং চাপ কমবে, অতিরিক্ত কিছু আর পড়তে হবে না। তাই দুশ্চিন্তার কিছু নেই কারণ তাদেরকে তো আমরা বেশি পড়াচ্ছি না বরং যা আগে পড়তে হতো তা কমিয়ে দিয়েছি।
নতুন মানবন্টন তুলে ধরে তিনি জানান: নতুন নম্বর বিভাজনে বাংলা দুটি বিষয় একত্রিত করে মোট ১০০ নম্বরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সৃজনশীল ও রচনামূলক অংশে ৭০ নম্বর এবং বহু নির্বাচনী অংশে ৩০ নম্বর বরাদ্দ থাকবে। প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নের নম্বর ১০ এবং প্রতিটি বহু নির্বাচনী প্রশ্নে নম্বর থাকবে এক। বাংলায় গদ্য অংশ থেকে ৩টি এবং কবিতা থেকে ৩টি করে মোট ৬টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে।
‘সারাংশ, সারমর্ম এবং অনুধাবন পরীক্ষণ থেকে ২টি প্রশ্ন থাকবে, যে কোনো ১টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এর জন্য ৫ নম্বর নির্ধারিত। ভাব-সম্প্রসারণ এবং অনুচ্ছেদ থেকে ২টি প্রশ্ন থাকবে, যে কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। যার নম্বর থাকবে ৫। ৩টি বিষয়ের মধ্যে যে কোনো ১টি বিষয়ের প্রবন্ধ রচনা লিখতে হবে, এর জন্য ১৫ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও বহু নির্বাচনী প্রশ্নে গদ্য অংশ থেকে ৮টি, কবিতা থেকে ৮টি এবং ব্যাকরণ থেকে ১৪টি মোট ৩০ বহুনির্বাচনী প্রশ্ন থাকবে।’
ইংরেজি বিষয়কে চারটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। পার্ট ‘এ’ অংশে এমসিকিউ রাখা হয়েছে। সেখানে রিডিংয়ে ৭টি প্রশ্ন, শূন্যস্থান পূরণে ৫টি এবং সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তরমূলক ৮টি প্রশ্ন থাকবে।
পার্ট ‘বি’ তে ইনফরমেশন ট্রান্সফারে ৫ নম্বর, সত্য/মিথ্যায় ৫ নম্বর, বিষয় শনাক্তকরণ ১০ এবং মিলকরণে ৫ নম্বর রয়েছে।
পার্ট ‘সি’ তে রয়েছে গ্রামার প্রশ্ন। এ অংশে থাকবে মোট ২৫ নম্বর; সেখানে বক্তৃতা, যতিচিহ্ন প্রশ্ন, ইউজ অব আরটিক্যালে, ভয়েস, সেনটেন্স, ইন্ট্রোগেটিভ, এফারমেটিভ, নেগেটিভ, এক্সক্লেমেটরি, সাফিক্স এবং প্রি-ফিক্স প্রশ্নে থাকচে ৫ করে নম্বর।
‘ডি’ অংশে রয়েছে ডায়ালগ, প্যারাগ্রাফ, ফরমাল-ইনফরমাল, আর ই-মেইলে থাকবে ১০ করে নম্বর।
জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে ২০১০ সাল থেকে চালু করা হয় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা জেএসসি ও জুনয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা জেডিসি। এসএসসি পরীক্ষা থাকার পরেও স্কুল পর্যায়ে এমন দু’টি পরীক্ষা আদো থাকার প্রয়োজন আছে কি-না এনিয়ে বির্তক দীর্ঘ দিনের।
কয়েক বছর আগে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে প্রাধানমন্ত্রীর কাছে জেলা প্রাশাসকরা অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বই আর পরীক্ষা কমানোর সুপারিশ করেছিলেন। এরই মধ্যে শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটিও সুপারিশ করে জেএসসি ও জেডি পরীক্ষায় নম্বর কমানোর।
গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় নম্বর কমানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ে ৫০ ও ইংরেজি বিষয়ে ৫০ এবং ঐচ্ছিক বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা না হয়ে তা ক্লাসে মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।