আজ পবিত্র হজ। লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত পবিত্র আরাফাত ময়দান। ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ পালনের জন্য বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার প্রায় ২৫ লাখ মুসলমান জমায়েত হয়েছেন মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য।
সারা দুনিয়ার মুসলমানদের জন্য দিকনির্দেশনা মূলক খুতবায় বলা হয়েছে, ‘জিহাদের নামে যেভাবে মানুষ হত্যা হচ্ছে সেটা ইসলাম সমর্থন করে না।’
পরে বিশ্ব মানবতার মঙ্গল কামনা করে দোয়া করেছেন হাজিরা। সেলাই ছাড়া দুই প্রস্থ ধবধবে সাদা কাপড় পরে মহান আল্লাহ রব্বুল আল আমিনের দরবারে এভাবেই নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নানা বর্ণের লাখ লাখ মুসল্লি।
আরবি আরাফাত শব্দের অর্থ পরিচিতি। সাড়ে ৩শ’ বছর পৃথিবীর নানা প্রান্ত ঘুরে পবিত্র এই ময়দানেই আবারো মিলন হয় প্রথম মানব আদম আলাই হিস সালাম এবং বিবি হাওয়ার।
ইহজগতের সব ইচ্ছা, চাহিদা আকাঙ্ক্ষা সবকিছু বিসর্জন দিয়ে পাপ মুক্তির আকুল প্রার্থনা নিয়ে মুমিন মুসলমানরা তিন দিকে পাহাড় ঘেরা দুই মাইল লম্বা ও দুই মাইল চওড়া আরাফাতের বিশাল প্রান্তরে।
আরাফাতের জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড়ের চূড়ায়, যেখানে আদম হাওয়ার পরিচয় হয়েছিল তার পাদদেশে দাঁড়িয়ে বিদায়ী হজে ভাষণ দিয়েছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম। সেই ভাষণের তাৎপর্য ছিলো মানুষ হিসেবে সবাই সমান মর্যাদার অধিকারী। তাই মানুষে মানুষে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল বিদায়ী হজের ঐতিহাসিক ভাষণে। সেই ইতিহাসকে ধারণ করে প্রতিবছর আরাফাত ময়দানে হাজির হন লাখো মুসল্লি।
এ বছর ১ লাখ ৭ হাজার জন বাংলাদেশী অন্য হাজিদের সঙ্গে এখন অবস্থান করছেন আরাফাতের ময়দানে। আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরা এবং বিভিন্ন দিক নির্দেশনা আরবি-ইংরেজির পাশাপাশি এবার বাংলায়ও লেখা।
এক নাগাড়ে হাঁটা আর সকাল থেকেই প্রচণ্ড রোদে অনেক হাজি অসুস্থ আর ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। তবে লাখ লাখ হাজির চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা আছে আরাফাতের এই মাঠে। তাছাড়া পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখার জন্য বিস্তীর্ণ এই মাঠে বৃষ্টির মতো কৃত্রিমভাবে ঠান্ডা পানি ছিটানো হচ্ছে। আছে হাজার হাজার নিম গাছ।
নিমের ছায়ায় আছেন অনেকে। কেউ পাহাড় ঘেষে আবার কেউ সুবিধাজনক জায়গায় বসে গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করছেন যার যার মতো করে।
হজের আনুষ্ঠানিকতার মূল অনুষঙ্গ পবিত্র এই আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরার মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবা দিয়েছেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আব্দুল আজিজ আল শাইখ। বলেছেন নিজেদের অনৈক্যের জন্যই সারা পৃথিবী জুড়ে রক্ত ঝরছে মুসলমানদের।
জোহর ও আসরের মাঝামাঝি সময়ে আরফাতের খোলা ময়দানে সকল হাজি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। এর পর মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে করা হয় মোনাজাত। পাপের সাজা থেকে মুক্তি চেয়ে আল্লাহর দরবারে হাজিরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত এই ময়দানেই চলবে হাজিদের ইবাদত বন্দেগি। হজের নিয়ম অনুযায়ী সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে হাজিরা পরবর্তী গন্তব্য ৫ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফার দিকে রওনা হবেন। মুজদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করে সেখানেই খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করবেন আল্লাহর মেহমানরা।
হজ উপলক্ষে সৌদী সরকার আরাফাত ময়দান, মুজদালিফা, মিনা ও এর আশে পাশের এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিয়েছে।