টেকসই বৈশিক উন্নয়নে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে জাতিসংঘ ২০১৬ সাল থেকে ২০৩০ সাল মেয়াদী যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ঘোষণা করে তার মধ্যে সমতাভিক্তিক শিক্ষা এবং লিঙ্গ সমতা বা নারীর ক্ষমতায়ন গুরুত্বপূর্ণ দুই লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ যে সঠিক পথে থেকে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে; আজকের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল সেটাই প্রমাণ করে।
এর আগে ২০১৫ সালে শেষ হওয়া জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) পূরণেও অগ্রগতি দেখিয়েছিল বাংলাদেশ, যা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল অনেক দেশ। অথচ এমজিডির ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে ৭টিতেই বাংলাদেশ ব্যাপক সফলতা পেয়েছিল, যার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে এসডিজিতেও। আর এমন সাফল্যেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের পথে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এ বছর মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা দিয়েছিল ২০ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৪ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ জন। পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৭। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন।
তবে গতবছরের তুলনায় পাসের কমেছে। ওই বছর ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। এই হিসাবে পাসের হার ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমলেও জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এই সংখ্যা ৫ হাজার ৮৬৮ জন।
এমন পরিসংখ্যানের মধ্যেও গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে মেয়েরা। এ বছরও পাসের হারে ছেলেদের তুলনায় তারা এগিয়ে। মেয়েদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। প্রায় দুই শতাংশ কমে ছেলেদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য কিছুটা এগিয়ে ছেলেরা। জিপিএ-৫ পাওয়া ৫৫ হাজার ৭০১ জন ছেলের বিপরীতে ৫৪ হাজার ৯২৮ জন মেয়ে পেয়েছে জিপিএ-৫।
গত নয় বছরের মধ্যে এসএসসিতে পাসের হার সর্বনিম্ন হলেও মেয়েদের ভালো ফলাফলের প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাসের হার যাতে মেয়েদের সমান হয় সেজন্য ছেলেদের আরো মনোযোগী হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
আমরা জানি, মেয়েদের এই ধারাবাহিক ভালো ফলাফল শুধু এসএসসিতেই নয়; এইচএসসিতেও তারা ভালো ফলাফল করছে। তবে অবাক করার মতো বিষয় হলো, এই ধারাবাহিকতা উচ্চ শিক্ষায় গিয়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই; অনেক অভিভাবকই নানা কারণে এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করা বহু মেধাবী মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগেই বিয়ে দেন। বিশেষ করে গ্রামে এই চিত্র খুবই সাধারণ বিষয়। শেষ পর্যন্ত এসব মেয়ে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়।
তার মানে ভালো ফলাফল করেও উচ্চশিক্ষায় গিয়ে বেশিরভাগ মেধাবী মেয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করার আগেই ঝরে পড়ে। আমরা মনে করি, এই ঝরে পড়া না ঠেকানো গেলে এসএসসি এবং এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করার পরও তাদের শিক্ষাজীবন অপূর্ণই থেকে যাবে।