চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

জাহালম কাণ্ড: মামলা হওয়া ১১ দুদক কর্মকর্তার নাম চান হাইকোর্ট

বহুল আলোচিত জাহালমকাণ্ডে নিজেদের যে ১১ তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে দুদক সেই কর্মকর্তাদের নাম-পরিচয় এবং তাদের বিরুদ্ধে কী কারণে মামলা করা হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী বুধবার ওই ১১ তদন্ত কর্মকর্তার নাম-পরিচয় এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলার কারণ হলফনামা আকারে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

আজ শুনানির শুরুতে দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আদালতকে বলেন, দুদকের অভ্যন্তরীণ তদন্তের আলোকে জাহালমের মামলা সংশ্লিষ্ট দুদকের ১১ তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। এরপর আদালত বলেন, আমরা সাধুবাদ জানাই যে দুদক ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু যে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলেন তাদের নাম কই?

জবাবে দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, নামগুলো দুদক আমাকে দেয়নি তাই আপনাদের কাছে দেয়া প্রতিবেদনে নামগুলো উপস্থাপন করা হয়নি।

দুদক আইনজীবীর জবাবে আদালত বলেন, আমরা এ প্রতিবেদন আজ গ্রহণ করছি না। নাম-পরিচয়সহ ওই কর্মকর্তাদের তথ্য আমাদের আবার দেবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কী কারণে মামলা করা হয়েছে, সে কারণগুলোসহ বুধবার আবার প্রতিবেদন দিন। জাহালমের ক্ষেত্রে মূল দুটি বিষয়ের একটি তার কারামুক্তি, সেটা হয়েছে। এখন রয়েছে তার ক্ষতিপূরণ বিবেচনার বিষয়টি। তবে এ ঘটনায় কারা দায়ী বা জড়িত সেটা দেখতে হবে। এরপর আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।

এর আগে দুদকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে জাহালমকাণ্ডে দায়ীদের বিরুদ্ধে দুদক কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানাতে গত ২৮ জুলাই নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে ধারাবাহিকতায় আজ দুদকের পক্ষ থেকে তাদের ১১ তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি আদালতে তুলে ধরেন।

আজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান। সোনালী ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শেখ মো. জাকির হোসেন। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।

পাটকল শ্রমিক জাহালমের প্রায় ৩ বছর ভুল আসামী হয়ে কারাভোগের বিষয়ে দুদকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সার্বিক বিবেচনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, জাহালমকে আবু সালেকরূপে চিহ্নিত করার যে ভুলটি হয়েছে, তা দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কারণেই ঘটেছে।’

এর আগে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটির বয়স ৩০-৩২ বছরের বেশি না। পরনে লুঙ্গি আর শার্ট। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ বিচারকের উদ্দেশে তাকে বারবার বলতে দেখা যায়, ‘‘স্যার, আমি জাহালম। আমি আবু সালেক না, আমি নির্দোষ।’

আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ২৬টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন এই জাহালম। যিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক। এরপর তদন্ত করে দুদক বলেছে, জাহালম নিরপরাধ। একই মত দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

পত্রিকায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি গত ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত। এরপর হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে ক্ষতিপূরণ রুলসহ জাহালমকে মুক্তির আদেশ দেন। এ আদেশের পর কারামুক্ত হন জাহালম।