খাবারের দোকানে গায়ে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ, প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৭০ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে প্রায় ৩০ জন।
বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে এ সংঘর্ষ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বটতলার একটি দোকানে বসে চা পান করছিলেন মওলানা ভাসানী হলের ৪৫তম আবর্তনের ছাত্র সৌরভ কাপালি। এ সময় সেই দোকানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৪৬তম আবর্তনের দু’জন শিক্ষার্থী দ্বীপ বিশ্বাস ও আলিফ আফসান দ্বীপ মিষ্টি খেতে যান। মিষ্টি খাওয়ার সময় সৌরভ কাপালির সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হলের ওই দুই শিক্ষার্থীর ধাক্কা লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সৌরভ বঙ্গবন্ধু হলের দুই শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় দেয়। এ সময় তিনজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে মওলানা ভাসানী হলের ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিতে হয়ে বঙ্গবন্ধু হলের ওই দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। তখন বটতলায় উপস্থিত দুই হলের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এলে উভয় হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
এ ঘটনার জেরে কিছুক্ষণের মধ্যে দুই হল থেকে শিক্ষার্থীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নিয়ে বের হয়ে আসেন। বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রায় ১০ রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৪৩ তম আবর্তনের হাবিবুর রহমান লিটন ও শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ সম্পাদক রাকিবুল হাসান শাওনসহ কয়েকজন ভাসানী হলের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে।
এক পর্যায়ে আশুলিয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অন্যদিকে মারামারির এক পর্যায়ে ভিডিও করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ভোরের কাগজের প্রতিনিধিকে হেনস্তা করে মওলানা ভাসানী হলের শিক্ষার্থীরা। পরে উপস্থিত সাংবাদিকরা তাকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় প্রক্টরিয়াল টিম এবং নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে সহকারী প্রক্টরিয়াল টিমের তিন সদস্য অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, প্রভাষক মহিবুর রউফ শৈবাল ও সহকারী অধ্যাপক মেহেদী ইকবাল আহত হন।
বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ঘটনায় আহত প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছে। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে গুরতর আহত প্রায় ৩০ শিক্ষার্থীকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘বটতলায় ছোটখাটো বিষয় নিয়ে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা শুরু হয়। পুলিশের সহযোগিতায় আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছি। তবে আরও সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা আছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।’