আর মাত্র পাঁচ দিন। তারপরই দীর্ঘ ২৮ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন না হওয়ার দায় মেটানোর লক্ষ্যে পৌঁছাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নানা বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে অবশেষে আগামী সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত ডাকসু নির্বাচন।
তবে এ দীর্ঘ সময় ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় নানাভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে দেশ ও জাতিকে। বিশেষ রাজনীতিতে গুণগত নেতৃত্বে অভাব স্পষ্ট হয়েছে। আর এ বিষয়টি অস্বীকার করেননি ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানও। সোমবার তিনি বলেছেন, ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় সঠিক নেতৃত্ব থেকে জাতি বঞ্চিত হয়েছে।
নির্বাচন ছাত্র-ছাত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে এদিন উপাচার্য আরো বলেন, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে। কেননা একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যদিও দীর্ঘ সময়ের যে শূন্যতা, তাকে অস্বীকার করেননি তিনি। সেই শূন্যতার কারণে নির্বাচনের পুরো কর্মযজ্ঞ সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নয় বলেও উল্লেখ করেছেন। কেননা পদে পদে তাদেরকে বিভিন্ন বিষয় নতুন করে ভাবতে হয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় যে নানামুখী সমস্যা, তাকে কেউই অস্বীকার করছে না। কেননা এসব সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েই এ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠনের বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মী অংশ নিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা সবাই চায়, নির্বাচনটা হোক। আর একটা নির্বাচন হয়ে গেলে পরের নির্বাচনগুলোও ধারাবাহিকভাবে হতে থাকবে।
আমরা জানি, ডাকসুকে এক সময় দেশের ‘সেকেন্ড পার্লামেন্ট’ বা ‘মিনি পার্লামেন্ট’ হিসেবে অবহিত করা হতো। কেননা সেখানে নেতৃত্ব দেওয়া বেশিরভাগ নেতাই জাতীয় রাজনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করতেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে সেই নজির আছে ভুরি ভুরি। বিশেষ করে ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে ডাকসুর যেসব নেতা নেতৃত্বে ছিলেন, তারাই আবার স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় বড় ভূমিকা রেখেছেন।
যেভাবে আর যে কারণেই হোক জাতি ২৮ বছর বঞ্চিত হয়েছে। আর যেন বঞ্চিত না হয়। আমরা মনে করি, একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই পারে ডাকসুর হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে।