মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গাদের মানবিক সঙ্কট উপেক্ষা করায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে অভিযুক্ত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। একইসঙ্গে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সান সু চির কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করেছেন এই দুই সংস্থার নেতারা।
জাতিসংঘ সদর দফতরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করে বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘের শক্তিশালী একটি সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও রাখাইনে তাদের কার্যকর কোন ভূমিকা না থাকায় সহিংসতার অবসান ঘটাতে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া অবিলম্বে চলমান সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠন দু’টি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে অবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য বুধবার জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। সুইডেন এবং ব্রিটেনের অনুরোধেই এ বৈঠক হচ্ছে বলে নিরাপত্তা পরিষদ জানিয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ২৫ আগস্ট সহিংসতা শুরুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তবে কক্সবাজারের স্থানীয়রা বলছেন, মিয়ানমারে চলমান সহিংসতায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।