জাতিসংঘের তদন্ত দলকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত আরাকান রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মিয়ানমার। জাতিসংঘে মিয়ানমারের প্রতিনিধি টিন লিন বলেছেন,মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এলাকায় শান্তি এবং আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। কোনো মিশনই রাখাইন ইস্যু সমাধানের জন্য সহায়ক নয় বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তার দেশ পরিদর্শনের আহ্বান জানানোর পরপরই দেশটির দূত জাতিসংঘের তদন্ত দলকে সে দেশে ঢুকতে না দেওয়ার কথা সাফ জানিয়ে দেন।
জাতিসংঘের তথ্য-অনুসন্ধান মিশনের প্রধান মারজুকি দারুসম্যান বলেছেন, ‘ মিয়ানমারে মানবাধিকারের যে লঙ্ঘন ঘটছে সেটা আমাদের নিজের চোখে দেখা জরুরী ’। তিনি বলেছেন, মারাত্মক ধরনের মানবাধিকারের বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের অবস্থা খতিয়ে দেখতে গত মার্চ মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ওই মিশন গঠন করে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর যে দমন-পীড়ন চলছে তার তদন্ত ওই মিশনের অন্যতম প্রধান কাজ। মিয়ানমার পরিদর্শনের অনুমতি না পেলেও অনুসন্ধান দলটি বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে তাদের প্রতিবেদন তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
মিয়ানমারের ক্ষুদ্র মুসলিম জাতিগোষ্ঠী রোহিঙ্গারা কয়েক দশক ধরে নির্যাতন ভোগ করে আসছে। গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ক্ষুদ্র একটা গোষ্ঠী ৩০টি পুলিশ স্টেশন এবং সামরিক ঘাঁটিতে হামলা করেছে এমন অভিযোগে সাধারণ রোহিঙ্গাদের উপর সহিংস হয়ে ওঠে মিয়ানমার সরকার।
জাতিসংঘ এ সহিংসতাকে ‘জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে দ্রুত এ সহিংসতা ও রাখাইনে সেনা অভিযান বন্ধের আহ্বান জানায়।
সেই সাথে আক্রান্ত অঞ্চলে মানবিক সহায়তা দানকারী সংগঠনের লোকদের কাজ করতে দেয়া এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে তাদের বাসস্থানে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানায়।
জাতিসংঘ তথ্য অনুসন্ধান অভিযানের চেয়ারম্যান মারজুকি ডারুসমান হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলকে সেপ্টেম্বর-২০১৮ এর মধ্যে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘ এই প্রতিবেদনের ফলাফল অনুযায়ী আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিব।’
তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন, মিয়ানমার সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে আমাদের সেখানে পৌঁছানো ও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে।
মিয়ানমারের বেসামরিক নেতা অং সান সুচি এসব সহিংসতার অভিযোগে আন্তর্জাতিক নিন্দা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের তদন্তকে ভয় পান না বলে জানিয়েছিলেন।