চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা

‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ শত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের বাণীর চিরন্তন সত্যের মতোই নারী আজ ঘরে-বাইরে সর্বত্র পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছে। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া বলেছেন, ‘কন্যাগুলিকে সুশিক্ষিত করিয়া কার্যক্ষেত্রে ছাড়িয়া দাও নিজের অন্নবস্ত্র উপার্জন করুক।’ বেগম রোকেয়ার সে কথার প্রতিফলন আজ আমরা সমাজে দেখতে পাচ্ছি। আধুনিক শহুরে জীবন থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম সব জায়গায়ই আজ নারী তার যোগ্যতা ও মেধা দিয়ে এগিয়ে চলেছে। নিপুণ হাতে ঘর-সংসার সামলানোর পাশাপাশি নিজের বলিষ্ঠ হাতে পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে করছে অর্থ উপার্জন। শত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও নারী আজ তার স্বমহিমায় উজ্জ্বল। কিন্তু নারীর কাঙ্খিত জাগরণ এখনো অনেক দূর। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া বলেছিলেন- ‘ভগিনীগণ! চক্ষু রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন- অগ্রসর হউন! বুক ঠুকিয়া বল মা, আমরা পশু নই। বল ভগিনী, আমরা আসবাব নই। বল কন্যে, আমরা জড়াউ অলংকার-রূপে লোহার সিন্দুকে আবদ্ধ থাকিবার বস্তু নই; সকলে সমস্বরে বল, আমরা মানুষ।’ এই আহ্বান নারী সমাজের জন্য চিরকালীন জাগরণের মূলমন্ত্র। পুরুষ শাসিত এই সমাজে এ আবেদন এখনো ফুরিয়ে যায়নি। নারীকে ঘরে বন্দি রাখার বিরুদ্ধে তিনি লিখেছিলেন, ‘পুরুষদের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে-একই। তাঁহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা, আমাদের লক্ষ্যও তাহাই। শিশুর জন্য পিতামাতা-উভয়েরই সমান দরকার। কি আধ্যাত্মিক জগতে, কি সাংসারিক জীবনের পথে-সর্ব্বত্র আমরা যাহাতে তাঁহাদের পাশাপাশি চলিতে পারি, আমাদের এরূপ গুণের আবশ্যক। প্রথমত: উন্নতির পথে তাঁহারা দ্রুতবেগে অগ্রসর হইলেন- আমরা পশ্চাতে পড়িয়া রহিলাম।’ নারীদের এই দুরাবস্থা সম্পর্কে বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক ও নারীবাদী লেখিকা সিমোন দ্য বোভোয়ার বলেছেন, ‘কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, বরং হয়ে ওঠে নারী।’ এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘পরিবর্তনে সাহসী নারী’ খুবই যথোপযুক্ত বলে আমরা মনে করি। সমাজের কোনো পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা বাধা যাতে একবিংশ শতাব্দীর সাহসী কোনো নারীকে দমিয়ে দিতে না পারে, এজন্য নারী দিবস উপলক্ষে কবির ভাষায় আমরাও বলতে চাই, ‘জাগো নারী জাগো বহ্নি-শিখা, …চির-বিজয়িনী জাগো জয়ন্তিকা।’