জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড ২০১৭’ পাওয়ার্ড বাই সেভেন আপ। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বসেছিল এই আয়োজন। এই আয়োজনকে ঘিরে শুরু থেকেই যেন ছিল এক উৎসবের আমেজ। সম্মেলন কেন্দ্রে প্রবেশের জন্য মূল ফটকে তারকা এবং দর্শকদের জন্য ছিল লাল গালিচা সংবর্ধনা। একে একে সবার উপস্থিতিতে ভরে যায় পুরো হল। হলের ভেতরে বেজে উঠে চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডের থিম সং।
সময়ের সাথে শুরু হলো অনুষ্ঠানের মূল আয়োজন। শুরুটা যেন একটু অন্যরকম। প্রথমেই মঞ্চে বাংলার ছয় ঋতুর আগমন। সানী জুবায়েরের পরিচালনায় মঞ্চে ছয় ঋতুর রাগে সুর দিয়ে শুরু হয় ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড ২০১৭’ অনুষ্ঠান। ছয় জন এক্যুয়েস্টিক যন্ত্রী এবং সানী জুবায়েরসহ আরও ছয় জন শিল্পী এই রাগে অংশ নেয়। ছয়টি ঋতুর উপর ছয়টি প্রাসঙ্গিক রাগের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এক এক জন নৃত্যশিল্পীর নাচ অনুষ্ঠানের শুরুতেই মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়।
এরপরই মঞ্চে আসেন অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা ফারজানা ব্রাউনিয়া। তার স্বাগত কথার পরপরই মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয় চ্যানেল আই এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর এবং আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম বেভারেজ লিমিটেডের পরিচালক খুরশিদ ইরফান চৌধুরী।স্বাগত বক্তব্যে ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, ‘এত বছর ধরে যে অনুষ্ঠানটি করছি, এটা আপনাদের অনুপ্রেরণার জন্য। শিল্পীদেরকে সম্মানিত করতে পেরে আমরা কৃতজ্ঞ। প্রতি বছর আমাদের চ্যানেল আইয়ের সংগীত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ৮ থেকে ১০জন শিল্পী পাই যারা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করছে তাদের কণ্ঠ দিয়ে। এর চেয়ে আজ আর বলার কিছু নেই। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।’
ট্রান্সকম বেভারেজ লিমিটেডের পরিচালক খুরশিদ ইরফান চৌধুরী বলেন, ‘সেভেন আপ সবসময় মিউজিকের সাথে আছে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সাগর ভাইকে এমন একটা আয়োজনে সেভেন আপকে পাশে রাখার জন্য। আমি আশা করব মিউজিক নিয়ে চ্যানেল আইয়ের যে যাত্রা, তার পরিসর আরও বাড়বে। দেশের সেরা চ্যানেল এবং আমরা পাশাপাশি এগিয়ে যাব।’
মঞ্চে তাদের উপস্থিতিতেই অনুষ্ঠানের শুরুতে দেওয়া হয় আজীবন সম্মাননা। এ বছর আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হলেন- বাংলা গানের কিংবদন্তি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। তার হাতে আজীবন সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান। সম্মাননাপত্র তুলে দেন কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী। এক লাখ টাকার চেক তুলে দেন এই আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম বেভারেজ লিমিটেডের পরিচালক খুরশিদ ইরফান চৌধুরী। এর আগে উত্তরীয় পরিয়ে শিল্পীকে বরণ করে নেন ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও পরিচালক মুকিত মজুমদার বাবু।
শুধু তাই নয়, বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয় শাম্মী আখতারকে। অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি তিনি। তার হয়ে সম্মাননা স্মারক ও ৫০ হাজার টাকার চেক গ্রহণ করেন স্বামী আকরামুল ইসলাম ও তাদের মেয়ে। এ সময় মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এবং শাম্মী আখতারকে নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।এই সম্মাননা প্রদানের পর সম্মান জানানো হয় সেই শিল্পীদের প্রতি যাদেরকে এ বছর হারিয়েছি আমরা। কিছুটা স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো হল। প্রিয় কিছু চেহারা ভেসে উঠে মঞ্চের টিভি পর্দায়।
তবে এরপরই সুফী সংগীত নিয়ে মঞ্চে হাজির হোন শফি মণ্ডল। তার সঙ্গে মঞ্চে উঠে আসে ১২ জন সহশিল্পী। সংগীতের আবহ কিছুটা যেন স্তব্ধ পরিবেশের পরিবর্তন ঘটায়।
গানের মুর্ছনায় যখন মেতে উঠছে দর্শক তখন ফাঁকে ফাঁকে প্রদান করা হচ্ছে চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড। তবে অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা মঞ্চে এসে গানের জন্য আহবান জানালেন এক সংগীত তারকাকে। আর তার নাম শুনে কিছু সময়ের জন্য দর্শকদের হাততালি আর চিৎকার দেখে কে? যার নাম ঘোষণা করা হলো তিনি আর কেউ নন জেমস। ‘তারায় তারায় রটিয়ে দেব’ এবং ‘সুলতানা বেবিয়ানা’ শিরোনামের গান গেয়ে মাতিয়ে তোলেন পুরো হল।জেমসের গান থামার সাথে সাথে দর্শকের চিৎকার ও হাততালি থেমে গেলেও পরক্ষণেই আবারো মঞ্চে একইভাবে স্বাগত জানানো হয় সংগীত তারকা ইমরান এবং চিত্রনায়িকার পূর্ণিমাকে। এই জুটি আলো ছড়ায় মঞ্চে। ইমরানের ‘বলতে বলতে চলতে চলতে’ গানে পূর্ণিমার কণ্ঠ অনুষ্ঠানের আরও মুগ্ধতা ছড়ায়। শুধু তাই নয়, এই জুটির সঙ্গে তানজিলের কোরিওগ্রাফিতে ২০জন নৃত্যশিল্পীর নাচ দর্শকদের কাছে ছিল পছন্দের তালিকায়।এরপরই মঞ্চে আসেন দেশের ৪ জন গুণী সুরকার আলাউদ্দিন আলী, শেখ সাদী খান, আলম খান এবং আলী হোসেন। তাদের কন্ঠে তাদের সেরা গান গেয়ে শোনান দর্শকদের। কিছু সময়ের জন্য সবাই যেন ফিরে গিয়েছিলেন পুরনো দিনে। মঞ্চে তাদের সম্মাননা প্রদান করা হয় এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়।
ঘড়ির কাটা ঘুরছে। অনুষ্ঠানের সময়ও ঘনিয়ে আসছে। তবে রেজওয়ান চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ গানের সাথে আত্মহত্যার বিরুদ্ধে একটি কোরিওগ্রাফি সবাইকে জাগিয়ে তুলেছিল। মন ছুঁয়ে যায় সবার গল্পের সাথে এমন এক নৃত্য পরিবেশনায়। তাই শেষ হয়েও যেন হলো না শেষ। সবার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলল অনুষ্ঠানের প্রতি।এরই রেশ ধরে মঞ্চে হাজির হন মমতাজ। তার সঙ্গে মঞ্চে আসেন সেরা কন্ঠের চার শিল্পী। ‘মা’ নিয়ে গান গিয়ে হলের দর্শকের আবেগে ভরিয়ে দেন মমতাজ। গানটি উৎসর্গ করা হয় সংগীতের সংশ্লিষ্ট সকল শিল্পী, গীতিকার ও সুরকারদের মা’দের প্রতি।
বিদায়ের ঘণ্টা বাজছে ঘড়ির কাটায়। অনুষ্ঠান থেকে মনোযোগ হারিয়ে বাড়ির দিকে যখন মনঃসংযোগ দিচ্ছেন দর্শকরা তখনই অনুষ্ঠানের মূল চমকের নাম শোনা গেল উপস্থাপিকার কণ্ঠে। এরপর যেন আবারও নরেচড়ে বসলেন সবাই। মঞ্চে আসলেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস।কয়েক মিনিটের জন্য মঞ্চ থেকে চোখ সরাতে পারলেন না দর্শকরা। অপুর সঙ্গে ৩০জন নৃত্যশিল্পী নাচ দিয়ে মুগ্ধ করে তোলেন দর্শকদের। আয়োজনের শেষ মুহূর্তে অপুর ধামাকা পারফর্ম্যান্স দর্শকের মনে আনন্দের খোরাক যুগায়।
ছবি: ওবায়দুল হক তুহিন