চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জঙ্গি হামলা আর নিখোঁজ কি এক সুত্রে গাঁথা!

গুলশানের সন্ত্রাসী হামলার উত্তাপের হল্কা পৌঁছেছে দিল্লী অবধি। মিটিং চলছে একনাগাড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা, গুলশান ঘটনার পর থেকেই। শনিবার ভাততের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার মন্ত্রীসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করছেন দফায় দফায়। যোগ বিয়োগ গুন ভাগ করছেন বার বার, তবুও অংক মিলছে না। কারা এই সন্তাসের পিছনে মদদ দিচ্ছে, কারা দিচ্ছে রসদ আর টাকা পয়সা! কেউ বলছেন আল কায়েদা, কেউ বলছেন না, আইএস। কেউ বলছেন আল কায়দা কীভাবে সম্ভব! আল কায়দা তো সব দিক দিয়েই এখন খুব দুর্বল হয়ে গেছে। আর আইএস মনে হয় পুরোপুরি নয়, যগসুত্র থাকতে পারে। অথবা তাদের ভাবাদর্শে কেউ অনুপ্রাণীত হয়ে কাজ করলেও হিসেব কিছুটা মেলে।

যা হউক এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন শুধু বাংলাদেশই নয়, সাথে ভারতও। আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে যে, ‘ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৪০৯৬ কিলোমিটার যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সীমান্ত দৈর্ঘ্য ২২১৭ কিলোমিটার। তাই বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সন্ত্রাস রোধে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে চাইছেন। যেমনটি ভারত করেছিল শ্রীলঙ্কায় তামিল জঙ্গি সংগঠন এলটিটিই-র বাড়বাড়ন্তের সময়।

তৎকালীন ভারত আর শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রীরা যোগাযোগ করতেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এবং তামিলনাড়ু সরকারের সঙ্গে। এটাকে নেহাত রীতি হিসেবে দেখা ভুল। এ ভাবে এগোলে সমস্যার সমাধান অনেক সহজে করা যায়। তাই ঢাকার গুলশানে জঙ্গি হামলার পর পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়’।

বাংলাদেশে জঙ্গি বিরোধী অভিযান হলেই, জংগী আর জামায়াতের লোকেরা সীমান্ত পাড়ি দেয়, ঘাঁটি গাড়ে ওপারে। সময় সুযোগ বুঝে আসে বাংলাদেশে, অপারেশনে। তাই আগের অভিজ্ঞতা থেকেই এবার মমতা নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘‘সীমান্তের জেলাগুলিতে অচেনা, সন্দেহভাজন লোক দেখলেই প্রশাসনকে খবর দিন’’। ‘খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত এবং পলাতক সোহেল মেহফুজ ওরফে হাতকাটা নাসিরুল্লা, কওসর ওরফে বোমারু মিজান, তালহা শেখ বা ইউসুফ শেখরা হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে তাড়া খেয়ে এ রাজ্যে ঢুকে পড়েছিল। তার পর ধীরে ধীরে এই রাজ্যে তারা জামাতুল মুজাহিদিন-বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সংগঠন গড়ে তোলে। বেশ কয়েক বার তারা লালগোলা সীমান্ত দিয়ে বোমা পাচার করেছে।

ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সোহেল মেহফুজ বা হাতকাটা নাসিরুল্লা মুর্শিদাবাদের লালগোলা, মালদহ, বর্ধমানের আসানসোল এবং বীরভূমেও বেশ কিছুদিন করে ঘাঁটি গেড়ে ছিল। কিন্তু মেহফুজ ধরা না পড়ায় ওই সব এলাকায় এখনও জেএমবি-র কোনও মডিউল সক্রিয় রয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়’।

এদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ঘুম হারাম করে দিয়েছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম আর আইএস ঘেঁষা জেএমবি। আইএস এর পত্রিকা ‘দাবিক’-এর গত সংখ্যায় বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশে তারা একটা বড় ধরণের কিছু করবে। বাংলাদেশ সরকারের কাছেও এই বার্তা ছিল। তাই সরকার মসজিদে মসজিদে সতর্ক করে দিয়েছিলো। সবাইকে সাবধান থাকতে বলেছিল।

অবশেষে গুলশান ঘটনার পরে বাংলাদেশের জঙ্গিদের কার কার সাথে আইএস যগ আছে তা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অনেকের মাঝেই নতুন করে ভাবনার জন্ম দিয়েছে।

গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গি হামলা দমনে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে অনেকেই নানা মন্তব্যে মুখরিত হয়েছেন। কেউ কেউ মনে মনে উৎফুল্ল হতে চেয়েছেন। কেউ বলেছেন অভিযান আগে করলে কিছু প্রাণ বাঁচলেও বাঁচতে পারতো। কোন কোন বিরোধী রাজনৈতিক দল বলতে চেয়েছেন যে, গণতন্ত্রহীনতাই জঙ্গিবাদের অন্যতম কারণ। কথাটা ধোপে টেকেনি।

অামেরিকা, ফ্রান্সসহ অনেকে গণতান্ত্রিক দেশেই এমন সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। তাই বেলা শেষে বিশ্বের অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত, জাপান, অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসিহ অন্যন্যরা যখন বাংলাদেশের গুলশান সন্ত্রাসের ঘটনায় সরকারের পদক্ষেপে সন্তোস প্রকাশ করেছে, পাশে থাকার অঙ্গিকার করেছে তখন অনেকেই তাদের কথার পাতা উল্টে ফেলেছেন।

ঢাকাস্থ বিদেশী দূতাবাসগুলো দেখেছে যে, জঙ্গি সন্দেহ করে সাথে সাথে পুলিশ ওদের পিছু নিয়েছিল। কিন্তু জঙ্গিদের শক্তি আন্দাজ করতে না পারায় চরম হোচট খাঁয়, পুলিশ অফিসারদের দু’টি মূল্যবান প্রাণ ঝরে যায়, আহত হন পুলিশের অনেকেই। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিলেট এলাকা থেকে কমান্ডোদের এনে অভিযান চালাতে সময় লেগে যায়। যদিও এর অনেক আগেই মানে রাত এগারোটার মধ্যেই জঙ্গিরা একে একে অপছন্দের সবাইকেই হত্যা করে ফেলে বলেনির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। টেলিভিশনে সরাসরি টেলিকাস্ট দেখে যখন জঙ্গিরা খবর পায় যে, দুইজন পুলিশ অফিসার মারা গেছেন, তখন তারা বুঝে নেয় যে তাঁদের আর বাঁচা সম্ভব নয়, তাই হত্যার কাজটা সেরে নেয়।

জঙ্গিদের গতিবিধি নিয়ে কাজ করা এক সাংবাদিক গ্রুপের নেতা যা দাবী করে তাতে রীতিমত পিলে চমকানোর দশা। তাঁর মতে ঢাকার বাইরে সিলেট এবং নোয়াখালীতে দুটি বড় মাপের শিবির আছে এদের। টাকা দেয় জামায়াত আর জামায়াত ঘরনার ব্যবসায়ী ও সমর্থক গোষ্ঠী আর দেশ।এসব শিবিরের নেতৃত্বে থাকে জামায়াত শিবির থেকে আসা গরীব কিন্তু মেধাবী ছেলেরা।তাদের ভাল জায়গায় পড়ার খরচ দেওয়া হয়, সাথে আরো অনেক টাকা।যখন যা,  লাগে। এরা সেইসব ছেলে যারা জীবনের বিনিময়ে পরিবারের অন্যদের সুখ কামনা করে কায়মনবাক্যে।এদের দিয়ে রিক্রুট করা হয় ইসলামী চিন্তার আবেগী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়া ছেলেদের।ধীরে ধীরে নেওয়া হয় নেশার জগতে, সিগারেট দিয়ে শুরু হলেও পরে তা দাঁড়ায় হেরোইনে, পুরো আসক্তি না হওয়া পর্যন্ত। টাকার যোগান দেয় ঐ নেতা। প্রথমে দিনে ২শ’, পরেদিনে ৫শ’ থেকে হাজার। এদের অনেকেই থাকে দেশের বড় অফিসারের বেপুথা ছেলে। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে এরা অনেকেই নিজের জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারেই জঙ্গিদের কাজে সহয়তা করে। যদিও পরে ঐ ছেলেরা চলে যায় জঙ্গিদের শিবিরে। নামাজ পড়ে আর হেরোইন খায়, আর বেহেরস্ত ৭০ হুরের সাথে ফুর্তি করার স্বপ্ন দেখে। এদের ব্যবহার করা হয়, মাদারীপুর বা গুলশানের মত এমন সব অপারেশনে। এরা জানে না বা চিন্তা করতে পারে না তারা কী করছে। ওরা সারাক্ষণ থাকে নেশার ঘোরে। তাই ‘আল্লাহু আকবর’ বলে মানুষ জবেহ করায় তাদের মনে কোন প্রভাব পড়ে না।।বিবেকে নাড়া দেয় না। স্বাভাবিক মানুষকে দিয়ে এতো মানুষকে জবেহ করে তার ফল ভাল হয়নি, বিবেক নাড়া দেয় তাদের। তাই নেশাগ্রস্থদের বেছে নেওয়া হয়েছে।

জঙ্গিদের বাবা-মা বা আত্মীয়দের জিজ্ঞাসাবাদের যে দাবী উঠেছে তা খুব অন্যায় না। সাম্প্রতিক দু’টি ঘটনায় দেখা যায় যে, এক বড় কর্মকর্তার আত্মীয় মাদারীপুরের রিপন চক্রবর্তী হত্যাচেষ্টায় খালেদ সাইফুল্লাহ যাকে ব্যবহার করেছিল সেই ফয়জুল্লাহ ঘটনা ঘটার কয়েকদিন আগেই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। অভিভাবকরা থানায় জিডি করেন। গুলশান অপারেশনেও এমন অন্তত একজন আছে যে এই ঘটনার আগে নিখোঁজ হয়, অভিভাবকরা থানায় জিডি করেন। তাই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে নিখোঁজ হওয়ার সাথে জঙ্গি হামলার একটা সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে সাম্প্রতিককালে, এটা নিয়ে ভাবতে হবে।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)