গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ২২ জনকে হত্যার দায়ে ৭ জঙ্গির ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত৷ ২৭ নভেম্বর ২০১৯, এই জঙ্গি হামলা মামলার রায় হল৷ ২০১৬ সালের ১ জুলাই এই ঘটনাটি ঘটে। মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই এই হামলা ঘটিয়েছিল তারা। বাংলাদেশে আইএস আছে এটি প্রমান করতেও একটি দেশী-বিদেশী চক্র মরিয়া হয়ে আছে। এই হামলা মামলার ৮ জন আসামীর মধ্যে একজন খালাস ও বাকী ৭ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষিত হল। আসামীরা সকলেই এতদিন কারাগারে ছিল। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মাথায় আইএসের পতাকার প্রতীক সংবলিত টুপি কিভাবে এলো এ নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা। এটাও নিশ্চয়ই মিডিয়া, আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ ও বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব আছে এটা প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই।
রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান রিগেন রায়ের পরে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের (ইসলামিক স্টেট) পতাকার প্রতীক সংবলিত টুপি পরে আদালত থেকে বের হয়। এরপর প্রিজন ভ্যানে তোলার পর দণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি জাহাঙ্গীর আলমকেও একই রকম টুপি পরতে দেখা যায়। পুলিশি হেফাজতে থাকার পরও তারা কীভাবে এ টুপি পেল তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা আলোচনা, সমালোচনা। তবে পুলিশ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করছেনা। কারাগার হতে প্রিজনভ্যান, প্রিজনভ্যান হতে হাজতখানা ও হাজতখানা হতে আদালতে সোপার্দ হয়েছে তারা। সারাক্ষণ পুলিশ প্রহরায় ছিল তারা। এমন অবস্থায় আইএসের টুপি পড়ে আল্লাহু আকবার বলে শ্লোগান তুলতে পারলো কীভাবে এই জঙ্গি হামলা মামলার আসামীরা। হলি আর্টিজান ট্র্যাজেডির এই আসামীরা দীর্ঘ দিন ধরে কারাগারে ছিল পুলিশী নিরাপত্তায়।
আসামী রাকিবুল হাসান রিগেন ও জাহাঙ্গীর আলম হলি আর্টিজান হামলা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৭ জনের ২ দুই জঙ্গিকে সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসের টুপি কারা সরবরাহ করল? টুপিটা সে কোথায় পরলো কারাগারে, প্রিজনভ্যানে না আদালতে? বাংলাদেশে আইএস নেই এই কথাটাকে মিথ্যা প্রমাণ করতেই কি এরকম আইএস টুপি পরে আদালতে হাজির হওয়া নয়? আইনমন্ত্রী বলছেন এই জবাব ওনার দেয়ার কথা নয়। তবে কার দেয়ার কথা? উত্তরটা যারই দেয়ার কথা দেশবাসীর তা জানা প্রয়োজন। কারাকর্তৃপক্ষ, রিগেনকে নিয়ে যাওয়া পুলিশ, হাজতখানা কর্তৃপক্ষ ও আদালতে নিয়ে যাওয়া সবই হয়েছে কড়া নিরাপত্তায়। এই নিরাপত্তা বেষ্ঠনীতে টুপিটা কে সরবরাহ করল? কাউন্টার টেররিজম কর্তৃপক্ষ বলছে,এটা আইএস টুপি নয়। তাহলে কিসের টুপি এটা? এ জবাবটাও জানা প্রয়োজন।
দু’জন আসামী এই টুপি কেন পড়ল? কারা ও কেন তাদেরকে এই টুপিটা দিল এই রহস্যটা উন্মোচন করাটাই মূল নয় কি? বিচারকরা পর্যবেক্ষনে বলেছে মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ টার্গেট করেই হলি আর্টিজান বেকারীতে হামলা করেছিল তারা। তবে কি তারা জেলে থেকেও সেই টার্গেটেই ছিল এতদিন? আইএস টুপি পরে যেভাবে হেসে হেসে আদালতে গিয়েছে এতেইতো তাদের উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার বোঝা গেছে। জঙ্গিবাদের ধর্মীয় উন্মাদনায় তারা তাদের ফাঁসিকেও নিজেদের শহীদ হওয়া ভাবছে।
বাংলাদেশে আইএস আছে একটা মহল এটা প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই হয়তো দুজন আসামীকে আইএসের লোগো সম্বলিত এই টুপি পরিয়ে দিয়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর কঠোর নজরদারী ও কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনিতে এমন একটি বিতর্কিত টুপি পরানোর ঘটনা কি সরকারের ব্যর্থতার দিককেই উন্মোচিত করেনা?
আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তারা কেউ জানেনা এই টুপির রহস্য। অথচ সরকারের নিয়ন্ত্রণে থেকেই এই আসামীরা আদালতে প্রবেশ করেছে। তবে কি তাদের পক্ষ বিপক্ষের আইনজীবীরাও তা দেখেনি? এ ব্যাপারে দুপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য আবশ্যক। আরও প্রয়োজন রায় ও আপিল আবেদনের সময়ে এই ৭ আসামীদের কাছ থেকে এর সঠিক তথ্য বের করা। ৭ জনের ২ জনকে টুপি পরানো হল আর ৫ জন কেন পরে টুপি পরলো না তাদের কাছ থেকে এ সম্পর্কিত বক্তব্য বের করাও আবশ্যক। আরও আবশ্যক কারা কর্তৃপক্ষ, প্রিজন ভ্যান, হাজতখানা ও আসামীদের আদালতে নিয়ে যাওয়া পুলিশদের বক্তব্য। এই ঘটনার আসল তথ্যকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে কারা রয়েছে? তারা কি পারবে এর আসল রহস্য উন্মোচন করতে? আমরা তদন্ত কমিটির আইওয়াশ ধর্মী হেলাফেলার তদন্ত প্রতিবেদন চাইনা।
জঙ্গিদের আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় তারা প্রিজনভ্যানের ভেতর থেকে চিৎকার করে নিজেদের কর্মকাণ্ডের পক্ষে শ্লোগান দিতে থাকেন। এত কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও এমন আস্পর্ধা তারা পেল কী করে? অপরাধ করবে আবার বুক ফুলিয়ে অপরাধের সাফাই গাইবে, বিচারককে গাল দেবে, সাংবাদিকদের গাল দেবে আর দেশকে করবে বিব্রত এগুলো কিসের ঈঙ্গিত? হামলা করে মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলো আবার দ্বিতীয়বারের মত আইএস টুপি পরেও তারা এমন দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করল।
সুতরাং হামলা, মামলা ও মামলার রায়ও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি। তারা আদালতেও তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করল। আপিল আবেদন চলাকালীন সময় অথবা রায় কার্যকরের আগে এই রহস্য উদঘাটন খুবই জরুরি। এই টুপির সাথে কারা সম্পৃক্ত, কাদের মাধ্যমে রিগ্যান ও জাহাঙ্গীর এটা মাথায় দিল রায় কার্যকরের আগে তা জরুরি ভিত্তিতে বের করা হোক।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)