অগণতান্ত্রিক পাকিস্তানের নানাবিধ সংকটের কথা নতুন নয়। দেশটির জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সেখানকার গণতন্ত্র সামরিক শাসনের কবলে পড়ে জর্জরিত। গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি এবং শাসকগোষ্ঠির নজিরবিহীন প্রশ্রয়ে জঙ্গিবাদের চারণভূমি হয়ে ওঠা পাকিস্তানে নতুন করে সংকট শুরু হয়েছে। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে গ্রেপ্তারের আগে ও পরে তিনটি নির্বাচনী সমাবেশে জঙ্গিদের হামলায় শতাধিক মানুষ মারা গেছেন।
এবারের সংকটেরও মূল হোতা দেশটির সেনাবাহিনী। নওয়াজ শরীফকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে এই সংকটের সূচনা করে তারা। নওয়াজ এবং তার মেয়েকে এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেপ্তারের দিনে বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের নির্বাচনী সমাবেশে সন্ত্রাসী হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আর এই হামলার টার্গেট বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি)। পাকিস্তানের এই দলটি জাতীয় রাজনীতিতে প্রগতিশীলতার চর্চা করে। এ কারণে ইতিপূর্বেও তারা আত্মঘাতী হামলার শিকার হয়েছে, নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীরা নিহত হয়েছেন। শুক্রবারের এই হামলায় একইভাবে বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির (বিএপি) প্রার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৩২ জন। আহত ২শ’র বেশি।
জঙ্গি সংগঠন কথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) নিজস্ব সংবাদ সংস্থা আমাক নিউজ এজেন্সির মাধ্যমে হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে হামলার কোনো কারণ উল্লেখ করেনি দলটি। শক্তিশালী গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে পাকিস্তান আর্মির সঙ্গে জঙ্গিদের সখ্যতার বিষয়টি নতুন নয়। এমনকি আল কায়েদার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেনকেও পাকিস্তানের ক্যান্টনমেন্ট এলাকা আ্যবোটাবাদে আশ্রয় দিয়েছিলো। এর আগে ২০০৮ সালে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোও নির্বাচনী প্রচারণার সময় ভয়াবহ বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন। গণতন্ত্র চর্চার অভাব ও সেনাবাহিনীর ভুমিকার জন্য সেখানে এমনটা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ গণতান্ত্রিকভাবে অনেক এগিয়ে রয়েছে। তবে আমাদের এখানেও যে গণতন্ত্র হোঁচট খায়নি তা নয়। একাধিকবার আমরাও স্বৈরশাসনের কবলে পড়েছি। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কখনোই স্বৈরশাসনের পক্ষে ছিল না। তারা বারবার রক্ত দিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে। তারপরেও পাকিস্তানের এই ভয়াবহ হামলা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কারণ জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস এর আগে হলি আর্টিজানে হামলার দায় স্বীকার করেছিল। এছাড়া আমাদের এখানে গণতন্ত্র থাকুক তা পাকিস্তান কখনোই চায় না। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র থেমে আছে ভাবার কোনো কারণ নেই।
আশঙ্কার মূল কারণ হলো- চলতি বছর বাংলাদেশের জন্যও নির্বাচনী বছর। তাই আমাদের সব রাজনৈতিক দলকে গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। ক্ষমতার মোহে গণতন্ত্রের পথে না থাকলে সেই সুযোগ বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী নিয়ে নেবে। তাই সময় থাকতে দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে সন্ত্রাস এবং স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে বলে আমরা আশা করি। একই সঙ্গে বাংলাদেশসহ গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সকল প্রতিবেশি দেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ দমনে যথাযথ ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানাই।