১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ৭ মার্চ সরাসরি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনেছিলেন। এরপর শত্রুর বিরুদ্ধে দেশে প্রতিরোধ লড়াই করে গ্রেনেড ছোড়া, রাইফেল চালানো শিখতে ভারতে গিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান। ডিসেম্বরে দেশে ঢোকার কথা থাকলেও তিনি ও সহযোদ্ধাদের আর ঢুকতে হয়নি। কারণ মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী ততোদিনে ঢাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। দেশ শত্রুমুক্ত হয়েছে, বিজয় অর্জিত হয়েছে এটা তিনি জেনেছিলেন ভারতে বসে রেডিও শুনে। তাই তখন বাংলাদেশের রাজপথে বিজয় পতাকা উড়ানো হয়নি তাঁর। দেশে ফিরে প্রতি বিজয় দিবসেই তাই লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে রাস্তায় নামেন তিনি।
এবারও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে বিজয় শোভাযাত্রায় অংশ নিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এসেছেন এই মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মনে করেন ১৯৭১ সালের অর্জিত বিজয় ১৯৭৫ সালে ছিনিয়ে নেয়ার পর আবার রক্ত রাঙা বিজয় ফিরতে শুরু করেছে।
রাজধানীতে বসবাস করা গোপালগঞ্জের এই মুক্তিযোদ্ধা চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান বিজয় ভাবনা, যুদ্ধদিনের কথা।
১৯৭১ সালে যুদ্ধদিনের কথাগুলো দিয়েই শুরু করেন তিনি,বলেন: খালি রাইফেল দিয়ে যুদ্ধ হবে না, বড় যুদ্ধে গ্রেনেড-মর্টার চালানো জানতে হয়। এজন্য অক্টোবরে আমরা ভারতে গেলাম। ১৬ ডিসেম্বর আমরা ভারতের বারাসাতের নীলগঞ্জে ক্যাম্পে ছিলাম। ডিসেম্বরের ৩ তারিখ থেকে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম আমরা। কারণ ওইদিন ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে পাকিস্তান যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলো। রেডিও পাকিস্তানে ঘোষণা দিলো যে তারা বারাসাত পর্যন্ত এসে পড়ছে। এইবার আমরা হাসলাম। কারণ এটা পুরোপুরি মিথ্যাচার। তবে অবস্থা এমন ছিলো যে অল্প দিনের ট্রেনিং নিয়েই আমাদের বাংলাদেশে ঢুকতে প্রস্তুত হতে বলা হলো। আমরা রেডি হয়ে গেলাম। কিন্তু ৭ তারিখ আমাদের জানানো হলো আমাদের আর ঢুকতে হবে না। এরই মধ্যে ১০ তারিখে ক্যাম্পে আসা একজন জানালো গোপালগঞ্জ শত্রু মুক্ত হয়ে গেছে। শুনলাম দলে দলে পাকিস্তানিরা বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় চলে যাচ্ছে।
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দানে সরাসরি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনা এই মুক্তিযোদ্ধার এখনো সেদিনের কথা মনে পড়লে শিহরণ জাগে, গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যায়।
অথচ জাতিকে মুক্তির মন্ত্রে দীক্ষিত করা মানুষটিকে হত্যার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের বিজয়কে ছিনিয়ে নেয়ার আক্ষেপ চেপে রাখতে পারেন না এই মুক্তিযোদ্ধা।
তিনি বলেন: আমাদের বিজয় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিলো। ১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ কোথাও বাজেনি। স্বাধীনতার শত্রুদের নিয়ে রাষ্ট্রপরিচালনা করা হয়েছে। একাত্তরের বিজয়ের আগে বাংলাদেশের শত্রুরা যেরকম শক্তিশালী ছিলো ৭৫ সালে আবার সেরকম শক্তিশালী হয়ে গেলো।
তবে দেশে বিজয়ের সুবাতাস আবার বইছে জানিয়ে তিনি বলেন: আগে আমাদের দেশে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসেও অভাব হতো। এখন পুরান ঢাকার নবাবপুরে দেখেছি আমার দেশের মানুষ দুই-তিন লাখ টাকা দিয়ে একটা ঝাড়বাতি কিনতে পারে। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের কারণেই আমরা অর্থনৈতিকভাবে দাঁড়াতে পারছি। দ্রব্যমূল্য এখন যাই হোক আমাদের সবার কাছে এখন পয়সা আছে। তবে রাস্তায়,কমলাপুরে এখনো দুস্থ মানুষের শুয়ে থাকা দেখলে কষ্ট লাগে।