বছর দুই আগে আইফোন সেভেন প্লাসে পোর্ট্রইেট মোড বা স্পষ্ট প্রতিকৃতি তোলার ফিচার যোগ হলে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। আইফোনের পথ অনুসরণ করে একে একে সব নামকরা স্মার্টফোন ব্র্যান্ড পোর্ট্রইেট মোড সংযুক্ত করে। এখন স্মার্টফোনে তোলা প্রতিকৃতি গুলো দেখে মনে হয় পেশাদার আলোকচিত্রীর দামি ক্যামেরায় তোলা ছবি যেনো।
বাজারে থাকা নামকরা ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনগুলোর কোনটি পোর্ট্রইেট তোলায় সেরা তা নিজের মতো বিচার-বিবেচনা করে একটি ফিচার লিখেছেন আভেরি হার্তমানস নামের একজন সৌখিন আলোকচিত্রী। স্মার্টফোন ক্যামেরায় ছবি তুলতে ভালোবাসা এই ব্যক্তি আইফোন এইট প্লাস, পিক্সেল টু এক্সএল এবং গ্যালাক্সি এস নাইন এই তিন স্মার্টফোনে তোলা পোর্ট্রেইট বিশ্লেষণ করেছেন।
এজন্য প্রথমেই তিনি চার দেয়ালের ভেতরে একটি বিষয় বেছে নেন। আইফোন, পিক্সেল এবং গ্যালাক্সি- এই তিন ফোনের ক্যামেরাতে কালো টেবিলের ওপর থাকা পাথরের টবে একটি ছোট গাছের ছবি তোলেন।তিন স্মার্টফোনে তোলা একই গাছের ছবি বিশ্লেষণ করে তিনি জানান, একেবারে বামের ছবিটি আইফোন এইট প্লাসে তোলা, ভালোই দেখাচ্ছে। তবে যে সুক্ষ্ম-তীক্ষ্মতা আশা করেছিলাম তা পাইনি বরং একটু ঘোলাটেই দেখাচ্ছে।
মাঝের ছবিটি পিক্সেল টু এক্সএল-এ তোলা। গাছটির সূক্ষ্ম এবং তীক্ষ্মতা বজায় রয়েছে। কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে বা পেছনের দৃশ্যে স্বাভাবিক যে ঘোলাটে বা ব্লার ভাব থাকার কথা সেটা হয়নি। ব্লার করতে গিয়ে পিক্সেল টু এখানে লেন্সের মুন্সিয়ানার চেয়ে বরং প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে বলে মনে হচ্ছে।
একেবারে ডানের ছবিটি গ্যালাক্সি এস নাইনে তোলা হয়েছে। এটাও খারাপ না। কিন্তু পিক্সেল টু’র মতো অতোটা তীক্ষ্মতা এতে নেই। তবে ব্লারের দিক দিয়ে এই ছবি অপেক্ষাকৃত ভালোই বলতে হবে। কারণ এখানে তেমন অতিরিক্ত কিছু চোখে পড়ে না।
অর্থাৎ গাছের ছবিগুলোর মধ্যে সব দিক বিবেচনায় পিক্সেল টু-ই বাকী দুই স্মার্টফোনের চেয়ে সেরা।
এতো গেলো ইনডোরে পোর্ট্রইেট তোলার তুলনা। এবার দেখা যাক চার দেয়ালের বাইরে অর্থাৎ ঘরের বাইরে ছবি তোলায় কোন স্মার্টফোনটি এগিয়ে।
মাথার ওপর ছাতা হাতে নিয়ে দাঁড়ানো একই ব্যক্তির ছবি তোলা হলো।
একেবারে বামের ছবিটি আইফোন এইট প্লাসে তোলা। মনে হলো এই ক্যামেরায় লোকটির ছবিটি একটু বেশি ক্রপ করা। তাছাড়া আইফোনের ক্যামেরা টোনের প্রচলিত উষ্ণতার কারণে লোকটির ত্বকে কেমন একটু কমলা আভা এসেছে।
মাঝের ছবিটি পিক্সেল টু-তে তোলা। এই ছবিটা বাকী দুই স্মার্টফোনে তোলা একই ব্যক্তির ছবির চেয়ে দারুণ। ছবিতে যে রং এসেছে সেগুলো বাস্তব জীবনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, অর্থাৎ একটুও বাড়াবাড়ি বা আরোপিত রং চং নেই।
একেবারে ডানের ছবিটা তোলা হয়েছে গ্যালাক্সি এস-নাইনে। ছবিটা ভালো হয়নি। পেছনের দৃশ্য অর্থাৎ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আলো যেন ঠিকরে বের হচ্ছে, যার প্রভাবে লোকটির বাহুর একটি অংশই চোখে পড়ছে না।
দেখা যাচ্ছে তিন স্মার্টফোনের মধ্যে আউটডোরে ছবি তোলাতেও বিজয়ী পিক্সেল টু।
তবে আউটডোরের এই ছবি তিনটি বিশ্লেষণ করলে আইফোন এইট প্লাস এবং পিক্সেল টু’র মধ্যে কে সেরা সেটা নির্ধারণ করা কিছুটা কঠিন মনে হয়। কিন্তু এখানেও গ্যালাক্সি এস নাইনের ছবিটি বাকী দুই স্মার্টফোনে তোলা ছবির তুলনায় হতাশাজনক।স্মার্টফোনের ক্যামেরার জন্য সীমিত আলোতে ছবি তোলাটা আসলেই চ্যালেঞ্জিং। এবার দেখা যাক স্বল্প আলোর চ্যালেঞ্জে কোন স্মার্টফোনটি বাজিমাত করে।
ছবি তিনটিতে স্পষ্ট যে আইফোন এইট প্লাস এবং গ্যালাক্সি এস নাইনে পোর্ট্রইেট তোলার জন্য প্রচুর আলো না থাকলে হয়না। কিন্তু এই কম আলোতেও পিক্সেল টু-তে ছবিটি দারুণ এসেছে।
ছবির মূল বিষয়বস্তুর পেছনে বেশি ভিড় থাকলে পিক্সেল টু-কে হিমশিম খেতে দেখা যায়। এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক্ষেত্রে আইফোন এইট প্লাস এবং গ্যালাক্সি এস নাইন এগিয়ে।
এখন দেখা যাক ইনডোরে পর্যাপ্ত আলো থাকলে কোন স্মার্টফোন ব্যক্তির চমৎকার পোর্ট্রইেট ছবি তোলা যায়।এক্ষেত্রে সেরা স্মার্টফোন কোনটি সেটা নির্ণয় করা কঠিন। আইফোন এইট প্লাসের ছবিটি সবচেয়ে উষ্ণ আভা ছড়াচ্ছে এবং এই নারীর ত্বকে উজ্জ্বলতা যোগ করেছে। ব্যাকগ্রাউন্ডের ব্লার ভাবটাও ভালোই। পিক্সেল টু-তে তোলা ছবিটি সুন্দর এবং তীক্ষ্ম। তবে ক্যামেরার অপেক্ষাকৃত শীতলতার কারণে ছবিটি কিছুটা নিষ্প্রাণও লাগছে। অন্যদিকে গ্যালাক্সি এস নাইনের ছবিটি এক কথায় অসাধারণ। বিষয়বস্তুর রং বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
এসব ছোটখাত ত্রুটি-বিচ্যুতি বিশ্লেষণ করে সবদিক দিয়ে পিক্সেল টু-কেই সেরা বলে মনে করেন আভেরি। তার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তিনটি ফোনেরই স্বকীয় কার্যক্ষমতা আছে। আইফোন এইট প্লাসের নেয়া ছবিতে সম্ভ্রান্ত ছাপটা থাকে। সমস্যা একটাই, বিষয়বস্তুকে অতিরিক্ত উষ্ণ দেখায়। গ্যালাক্সি এস নাইনে বিষয়বস্তুর রং ভালো ভাবে ফুটে ওঠে। কিন্তু অতিরিক্ত আলো এবং স্বল্প আলোতে এর ক্যামেরা অসহায়। অথচ পিক্সেল টু দিয়ে তোলা ছবিতে অপেক্ষাকৃত কম ত্রুটি থাকে। বিষয়বস্তু দূরে বা কাছে হলেও ছবি হয় দারুণ। আলো কম না বেশি এটাও খুব একটা সমস্যার মুখে ফেলে না।