রাজধানীর বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন নাট্যজন, শিক্ষাবিদ ড. ইনামুল হক। বাদ জোহর তাকে বনানী কবরস্থানে চতুর্থ নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হয়।
সকালে তাঁর মরদেহ নেয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ইনামুল হকের মরদেহ নেয়া হয়েছিল বুয়েটে। সেখানকার মাঠে নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছিল।
শহীদ মিনারে ড. ইনামুল হকের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে অসীম কুমার উকিল ও সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপসসহ অনেকে।
শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে তথ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি ইনামুল হক আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করে গেছেন, বহু কালজয়ী নাটকের স্রষ্টা তিনি, বহু কালজয়ী নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। একইসঙ্গে চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেছেন। তার মতো এমন একজন গুণী মানুষের হঠাৎ প্রস্থান, সত্যিকার অর্থেই এটি জাতির জন্য বেদনার, আমাদের সবার জন্য বেদনার।
বাংলাদেশ বেতার-টেলিভশন শিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, টেলিভিশন নাট্যকার সংস্থাসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘ইনাম ভাই বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেছেন এবং নিজের ভেতরে গেঁথে রেখেছেন। তিনি তার পুরো পরিবারকে নিয়োজিত করেছিলেন এই শিল্প সাধনায়। এটি একটি বিরল উদাহরণ। তিনি নিজে, তার স্ত্রী, কন্যা এবং তাদের স্বামী, প্রত্যেকেই জড়িত বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এবং মঞ্চ নাটকের সাথে। এটি সচরাচর দেখা যায় না।
তিনি বলেন, একজন মুক্তিযুদ্ধের বিশ্বাসী, বাঙালি সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী এবং তার চর্চাকারী একজন নেতৃস্থানীয় মানুষের চলে যাওয়ায় আমরা যেই শূন্যতায় পড়েছি তা কোনোদিনই পূরণীয় নয়।’
অভিনেতা-নাট্যকার ড. ইনামুল হক সোমবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। সন্ধ্যায় একুশে পদক প্রাপ্ত এ গুণী অভিনেতার বেইলি রোডের বাসায় প্রথম নামাজে অনুষ্ঠিত হয়। পরে ৭টার দিকে শিল্পকলা একাডেমিতে দ্বিতীয় নামাজে সম্পন্ন হয়।
তিনি ১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী জেলার মটবী এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে অনার্স ও এমএসসি সম্পন্ন করে মানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি পিএইচডি লাভ করেন। পরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দীর্ঘ ৪৩ বছর শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
গুণী এই অভিনেতার পুরো পরিবার নাটকে সম্পৃক্ত। তার স্ত্রী লাকী ইনামও কিংবদন্তি অভিনেত্রী। মেয়ে হৃদি হক নির্দেশক এবং অভিনেত্রী। তার জামাতা অভিনেতা লিটু আনাম। ড. ইনামুলের অপর মেয়ে পৈত্রি হকের স্বামী অভিনেতা সাজু খাদেম।