শিল্প ইতিহাসে ভবন ধসে সব চেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছিলো সাভারের রানা প্লাজায়। এখনও রানা প্লাজা এলাকায় প্রিয়জনকে খুঁজতে আসেন অনেক মানুষ। রানা প্লাজার জায়গাটি ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন সাভার উপজেলার নির্বাহী অফিসার।
রাজধানীর উপকন্ঠে সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল ৮ তলা ভবন রানা প্লাজার ৩ ও ৪ তলার মাঝখানের কয়েকটি পিলারে থাকা ফাটলের কিছু অংশ ভেঙে পড়তে দেখেন শ্রমিকরা। সে সময় ছোটাছুটি করে নামতে গিয়ে দু’ জন আহত হন।
২৪ এপ্রিল সকালে ‘বাঁচা মরা আল্লাহর হাতে’ এমন কথা বলে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করে কয়েকটি গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা কাজ শুরুর পরপরই সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভবনটি ধসে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কিছুক্ষণের মধ্যেই উদ্ধার অভিযানে নামে সেনাবাহিনী। উদ্ধার অভিযান, আহতদের রক্ত দেয়া সহ সব ধরনের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে সাধারণ মানুষও। উদ্ধার অভিযানে বের করা হয় আটকে থাকাদের। উদ্ধার হতে থাকে মৃতদেহ। উদ্ধার অভিযান যখন শেষ পর্যায়ে, তখন সবাইকে অবাক করে ৪শ’ ৮ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার করা হয় পোশাক শ্রমিক রেশমাকে।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে মৃত্যু হয় ১ হাজার ১শ’ ৩৫ জনের। জীবিত উদ্ধার করা হয় ২ হাজার ৪শ’ ৩৮ জনকে। সেই রানা প্লাজা এলাকায় এখনও আসেন নিহতদের স্বজন আর আহত শ্রমিকরা।
রানা প্লাজার সেই দুর্ঘনায় আহত এক শ্রমিক বলেন, শরীর এখনও কাঁপে, কাজ করতে পারেন না, এখনও সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারেননি তিনি। চোখ বন্ধ করলেই সেই বিভীষিকা চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
ছেলে হারানো এক মা প্রশ্ন করেন, চার লাখ টাকা ওই চিঠির মধ্যে লেখা। এই চার লাখ টাকা কি তার বিশ বছরের ছেলের মৃত্যুর দাম? তিনি আরো বলেন, ওই চার লাখ টাকা তিনি রেখে দেবেন। যেদিন রানা মারা যাবে সেদিন ওই টাকা দিয়ে তিনি মিলাদ মাহফিল দিবেন।
ছেলে হারানো আরেক মা বলেন, তার বংশের একমাত্র প্রদীপ তার সন্তানকে হারিয়েছেন তিনি এই রানা প্লাজায়। ছেলের লাশটিও খুঁজে পাওয়া যায়নি তার।
রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্থদের বিভিন্ন ভাবে সহায়তার কথা জানান সাভার উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা। তিনি বলেন, রানা প্লাজার যে জায়গাটি আছে তা রাষ্ট্রীয়ভাবে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ওই জায়গাটি এখন শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যবহার করা হবে বলে জানান তিনি।
রানা প্লাজা ধসের পরপরই পালিয়ে যাওয়া ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে বেনাপোল দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় তার দুই আশ্রয়দাতাসহ গ্রেফতার করে র্যাব। রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৮টি। আর সোহেল রানা এখন কারাগারে।