প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন নতুন দিকমাত্রা পেয়েছে। অবশ্য আন্দোলনকারীদের মতো আমরাও কোটা সংস্কারের পক্ষে, বিলোপের পক্ষে নই। কারণ পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে (যেমন আদিবাসী) উন্নয়নের ধারায় আনতে কোটার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে যা ঘটেছে তা নিয়ে আমরা ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন।
আমরা মনে করি শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা ছিল। কারণ কোনো পরিস্থিতিতেই কোটা সংরক্ষণ মোট আসনের শতকরা ৫৬ ভাগ হতে পারে না। এই ন্যায্য ও যৌক্তিক আন্দোলন থেকে উত্থাপিত দাবি বিবেচনা না করে সরকার প্রথমত উপেক্ষা ও দ্বিতীয়ত দমন ও পীড়নের নীতি গ্রহণ করেছে, অবশেষে আন্দোলন তীব্র হলে দাবি মানতে বাধ্য হয়েছে।
রোববার দিন ও দিবাগত রাতে আন্দোলনকারীদের অহিংস ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে পুলিশী হামলা ও নির্যাতন করা হয়।অন্যদিকে পুলিশের পাশাপাশি বহিরাগত সন্ত্রাসীরা দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে।আন্দোলন এরপর বেগবান হয়ে সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে রোববার রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসায় হামলা হয় এবং ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করা হয়, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় একটি ঘটনা।
এরকম পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কেউই নিরাপদ নয়।পুরো ঘটনা নিয়ে আমাদের সক্রিয় পর্যবেক্ষণ রয়েছে এবং কিছু দাবি রয়েছে। আমাদের পর্যবেক্ষণ ও দাবিগুলো হলো:
১। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে। সংবিধানের আলোকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে কোটা সংস্কারের রূপ নির্ধারণ করতে হবে। কোটা বিলোপ সংবিধান পরিপন্থী সিদ্ধান্ত হবে বলে আমরা মনে করি।
২। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিনা উস্কানিতে পুলিশী হামলার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
৩। উপাচার্যের বাসভবনে নিন্দনীয় হামলার পরে উপাচার্য মহোদয় নিজেই জানিয়েছেন এই হামলার পেছনে প্রশিক্ষিত দুষ্কৃতিকারীরা যুক্ত ছিল।নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এই হামলাকে কেন্দ্র করে পুরো আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা মনে করি এটি প্রকৃত অর্থেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এজন্যই ঐ হামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত আমরা দাবি করছি।পাশাপাশি চারুকলা অনুষদের অভ্যন্তরে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিমূলক সরঞ্জামাদি ভাঙচুরের নিন্দাও জানাই।
৪।রোববার ও সোমবার রাতে সশস্ত্র বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশ ও ত্রাস সৃষ্টির ঘটনার প্রতি আমরা তীব্র নিন্দা জানাই এবং আর কোনো বহিরাগত যেন ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারে সেব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
৫। শিক্ষার্থীরা যাতে নিরাপদে ছাত্রাবাসে থাকতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।ছাত্রাবাসগুলোতে আসন বরাদ্দ প্রক্রিয়া ছাত্র সংগঠনের হাত থেকে নিয়ে ছাত্রাবাস প্রশাসনকে পুরোপুরি গ্রহণ করতে হবে।
৬। জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা অভিনন্দনযোগ্য। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও দলীয় আনুগত্যের ঊর্ধ্বে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত স্বার্থসংশ্লিষ্ট ভূমিকা রাখবে এই দাবি আমাদের।শিক্ষক সমিতিদের কোনোটি প্রথম থেকে এবং কোনোটি বিলম্বে আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছে। শিক্ষক সমিতিগুলো এইভাবে সবসময় দলীয় স্বার্থের বাইরে এসে জনস্বার্থ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বার্থকে সমুন্নত রাখবে,এই প্রত্যাশা আমরা করি। ৭। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এছাড়া সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অ্যাকাডেমিক পরিসর ও ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
স্বাক্ষর প্রদানকারী মোট ৩৩ জন শিক্ষক হলেন আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। মোশাহিদা সুলতানা, সহযোগী অধ্যাপক, একাউন্টিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কাজী অর্ক রহমান, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
সৌম্য সরকার, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ।
কাজী মসিউর রহমান, ইংরেজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
নেহাল করিম, অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ফাহমিদুল হক, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
মুনাসির কামাল, সহকারি অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
শরমিন্দ নীলোর্মি, সহযোগী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
সাজ্জাদ এইচ সিদ্দিকী , সহকারী অধ্যাপক শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন ঢাকা বিস্ববিদ্যালয়।
মো. আনওয়ার হোসেন , অধ্যাপক , সমাজবিজ্ঞান বিভাগ , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ড: মো: খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
দেবাশীষ কুন্ডু, সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সামিনা লুৎফা, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সায়মা আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, সহযোগী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ড. মো আব্দুল মান্নান, সহযোগী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অভিনু কিবরিয়া, সহকারি অধ্যাপক, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
মাহমুদুল সুমন, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
আইনুন নাহার, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
মানস চৌধুরী, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
নাসিম আখতার হোসাইন, অধ্যাপক সরকার ও রাজনীতি বিভাগ,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
ফাহিমা আল ফারাবি, সহকারি অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
বখতিয়ার আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
দীপ্তি দত্ত, প্রভাষক, প্রাচ্যকলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
স্বাধীন সেন, অধ্যাপক, ভূতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
হাবিবা রহমান, সহকারি অধ্যাপক, টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
মোঃ তানভীর আহসান, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
পারভীন জলী, সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
সুকান্ত বিশ্বাস, সহকারি অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।