সিনেমায় এসে আলোচিত হয়েছেন ছোটপর্দার অর্চিতা স্পর্শিয়া। ধ্যান জ্ঞান এখন সিনেমা! ‘আবার বসন্ত’র পর ‘কাঠবিড়ালী’ ছবিতে তার অভিনয় ছুঁয়ে গেছে দর্শদের হৃদয়। তিনি এবার কাজ করছেন চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় তারকা শাকিব খানের সঙ্গে। অনন্য মামুন পরিচালিত এ ছবির নাম ‘নবাব এলএলবি’। সম্প্রতি শুটিং সেটে গিয়ে দেখা যায় স্পর্শিয়ার ঠোঁটের কোনা থেঁতলে আছে! এ অবস্থায় তিনি শুটিংস্পটে কী করছেন? জানতে চেয়েই আলাপ শুরু, যার চুম্বক অংশ থাকলো চ্যানেল আই অনলাইনের পাঠকদের জন্য…
আপনার ঠোঁটের কোনায় কী হয়েছে?
৭ সেপ্টেম্বর প্রথমদিনের শুটিংয়ের আগে চরিত্রে ঢুকতে সত্যি সত্যি সেফটিপিন দিয়ে ঠোঁট থেঁতো করেছি। অনেকটা থেঁতলে গেছে। জানেন ব্যথাও অনেক! মূলত চরিত্রের কারণেই এটা করেছি। স্ক্রিনে যেন এটা সত্যি মনে হয় তাই মেকাপ না দিয়ে সত্যি সত্যি এটা করেছি।
আপনার চরিত্রটি কেমন, চরিত্রের প্রস্তুতি কেমন?
শুটিং চলাকালে চরিত্র নিয়ে বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এটা দর্শক স্ক্রিনে দেখুক। এই চরিত্রটা রপ্ত করতে অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা করে আলাপ করতে হয়েছে। অসংখ্য সিনেমা দেখতে হয়েছে। সিনেমার চরিত্র বহন করা জার্নির মতো। আমি আমার জার্নিতে সঠিকভাবে আগানোর চেষ্টা করছি। এতোটুকু বলতে চাই, চরিত্রটা নিজের মধ্যে ভর করে রাখতে খুব বেশি কোথাও যাচ্ছি না। আড্ডাও দিচ্ছি না। বাসার সদস্যদের সঙ্গে কম কথা বলছি। ফেসবুকেও তেমন সময় দিচ্ছি না। এককথায় চরিত্রে ডুবে থাকার চেষ্টা করছি। এখনও পর্যন্ত যতগুলো চরিত্র করেছি কোনোটাতেই পূর্ণ তৃপ্তি আসেনি। কাজ শেষে মনে হয়, ‘ইশ! আরও যদি বেটার করতে পারতাম।’ আমি চাইছি, এই চরিত্রটি আমাকে পূর্ণ তৃপ্তি দিক। তবে আমার প্রস্তুতি দেখে পরিচালকসহ অন্যরা খুব হ্যাপি।
ঠিক কোন কারণে ‘নবাব এলএলবি’-তে কাজ করতে রাজি হলেন?
গতবছর আমার জন্মদিনে অনন্য মামুন গল্পটা শুনিয়েছিল। বলেছিল, চরিত্রের নাম শুভ্রা। এ গল্পে আমাকে নিয়ে কাজ করবে। গল্প ভালো লেগেছিল, আর জন্মদিনের সারপ্রাইজ ছিল বলে রাজি ছিলাম। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে পরিচালক জানায়, গল্প রেডি। ‘উই আর রেডি টু গো’। তারপর জানতে পারি, ছবিতে থাকবেন শাকিব খান ও মাহিয়া মাহি। সবকিছু ভেবে দেখলাম মন্দ হয়না, তাহলে কাজটা করেই ফেলি।
বাংলাদেশের সিনেমার সবচেয়ে বড় তারকা শাকিব খানের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করছেন। কেমন লাগছে?
শুটিং শুরুর আগে শাকিব ভাইয়ের সঙ্গে বসে আমরা কাজ নিয়ে আলোচনা করেছি। গ্রুমিং করেছি। উনি এতো চমৎকার একজন মানুষ দূর থেকে সেটা কেউ বুঝতে পারবে না। আমার আগের কাজগুলো দিয়ে অভিজ্ঞতা হচ্ছে, সিনিয়র আর্টিস্টদের সঙ্গে কাজ করলে অনেককিছু শেখা যায়। যেগুলো খুব উপকারে আসে। এছাড়া সিনিয়র আর্টিস্টরা খুবই হাম্বল (বিনয়ী) হন। শাকিব ভাইয়ের মধ্যেও সেই পূর্ণ বিনয় পেয়েছি। তিনি খুবই হেল্পফুল। তাই কোনো ধরনের চাপ অনুভব করছি না। বরং হ্যাপি ফিলিং কাজ করছে। কয়েকদিন দেখেছি, আমার আগেই শাকিব ভাই শুটিং সেটে চলে আসছেন, হা হা হা…। সবমিলিয়ে বুঝেছি, উনি সুপার ট্যালেন্টেড শিল্পী। এজন্যই বোধহয় উনি বাংলাদেশের সিনেমার ‘নাম্বার ওয়ান হিরো’।
মাহিয়া মাহির মতো জনপ্রিয় নায়িকাও আছেন ছবিতে। তাকে সহশিল্পী হিসেবে কেমন লেগেছে? ছবিতে তার মতো নায়িকা থাকা সত্ত্বেও আপনার গুরুত্ব কতখানি?
মাহি খুবই ওয়েলকামিং। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, সে হয়তো একটু ভাব নিয়ে থাকবে! কিন্তু একদমই তা করেনি। তবে কেন জানি আমি একটু স্বার্থপর শিল্পী। আমি আমার চরিত্র, গল্পটা কী- সেটা আগে খুঁজি। তাই এককথায় বলছি, আমার উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ না হলে কখনই এ ছবি করতাম না। বাকিটা ছবি দেখলে দর্শক বুঝতে পারবে।
‘আবার বসন্ত’, ‘ইতি তোমার ঢাকা’, ‘কাঠবিড়ালী’ কিছুটা ভিন্ন ধারার ছবি। কিন্তু ‘নবাব এলএলবি’ ফর্মূলা বেইজ ছবি। অন্য ছবিগুলো থেকে এটায় কাজের ধরন আলাদা লাগছে?
এটা আমার ছয় নম্বর সিনেমা। যে কাজটাই করি, আমি আমার অংশের মধ্যেই বসবাস করি। আশপাশের ধরন বা রকম কোনো কিছুই মাথায় কাজ করে না। হতে পারে মেকিং ধরন একটু আলাদা। সেটা আমার দেখার বিষয় না। আমার চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলাই আমার কাছে আসল। আমার কাছে মনে হয়, বাংলা সিনেমায় এটা ব্যতিক্রমী কমার্শিয়াল সিনেমা হবে।
শোনা যাচ্ছে, আসন্ন শারদীয় উৎসব উপলক্ষে ‘নবাব এলএলবি’ ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অ্যাপে মুক্তি দিয়ে সাফল্য পাওয়া সম্ভব?
আমার মনে হয়, এ ছবি দিয়েই সাফল্য আসা শুরু করবে। করোনায় ঘরে থাকতে থাকতে আমাদের দর্শকদের অলরেডি অনলাইনে ছবি দেখার অভ্যাস হয়ে গেছে। অন্য দেশের বড় বড় বাজেটের ছবিগুলো হলে মুক্তি দিয়ে ওটিটি-তে দেয়া হচ্ছে। তারা সেখান থেকে সফল হয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমাদের দর্শক যেহেতু এখন ‘ইউজ টু’ হয়েছে আমরাও সফল হবো।
অনন্য মামুনের ‘বন্ধন’ ছবি করেছেন। এরপর ‘আবার বসন্ত’ করলেন। এবার ‘নবাব এলএলবি’। বারবার একই পরিচালকের সঙ্গে কাজের কারণ কী?
অনন্য মামুনের টিমের সঙ্গে আমার একটা পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে গেছে। পরিচালক তিনি অবশ্যই ভালো। আগের দুটো সিনেমা করতে গিয়ে তার সঙ্গে মাঝেমধ্যে ঝগড়াও হয়েছে। কিন্তু এবার আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি, ঝগড়া না করে সিনেমা শেষ করবো। তবে এটা সত্যি, পরস্পরের সঙ্গে কাজ করে কমফোর্ট অনুভব করি।