বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুষ বা অর্থ, এমন কি কোনো সুপারিশ-তদবির ছাড়াই পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পাচ্ছেন যোগ্য ও মেধাবীরা। মূলত লিখিত পরীক্ষায় পাসের পর মৌখিক থেকে শুরু অন্য সব পরীক্ষাগুলোতেও নিজেদের মেধার ভিত্তিতে জায়গা করে নিচ্ছেন তারা। এর সর্বশেষ সংযোজন জয়পুরহাট জেলা।
চ্যানেল আই অনলাইনের একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জয়পুরহাটে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন ২৫ জন। যাদের মধ্যে কেউ এতিম, আবার কেউ রাজমিস্ত্রী, কৃষক, কিংবা দিনমজুরের সন্তান। আবার সেখানে আছেন সিএনজি চালকের সন্তানও। সহজে বললে, তারা সবাই অসচ্ছল পরিবারের সন্তান।
নতুন চাকরি পাওয়া পুলিশ সদস্যের কেউই আগে বিশ্বাস করতে পারেননি- টাকা ছাড়াও পুলিশ চাকরি হয়। প্রভাবশালীদের তদবির বা সুপারিশ ছাড়াও চাকরি পাওয়া যায়। চাকরি পাওয়ার পর তাদের সেই ভুল ভেঙেছে। এমন আয়োজনে জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তার মতো অন্য যেসব জেলার পুলিশ সুপার মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিচ্ছেন; তারাও ধন্যবাদ পাবেন।
স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ও দুর্নীতি মুক্ত নিয়োগ আসলে অনেক বড় চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। বিশেষ করে যে দেশের পুলিশ প্রশাসনে নানান অনিয়মের ঘটনা সুবিদিত। সেই পরিবেশের বাইরে গিয়ে ঘুষ ছাড়া চাকরি দেওয়া যেমন কঠিন, চাকরি পাওয়া তারচেয়ে আরও কঠিন। তাই এই প্রক্রিয়ায় চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরা এখন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না, কিভাবে এটা সম্ভব!
নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীতদের একজন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার মির্জাপুর বড়গাছা গ্রামের মো. আল আমিন। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি অনেক ছোট থাকতে বাবার মৃত্যু হয়। মা আবার বিয়ে করে। এরপর থেকে আমি জয়পুরহাট সরকারি শিশু পরিবারে বড় হই। শুধু আবেদনের ফি ছাড়া কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন ছাড়াই চাকরি হলো। এটা আমার কল্পনাতেও ছিল না।’
আরেকজন ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর নারায়ণপাড়ার খলিলুর রহমানের ছেলে মো. রাজু সরদার। তার পরিবারের অবস্থাও করুণ। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা রাজমিস্ত্রীর সহকারি হিসেবে কাজ করে। বাবার মাসিক আয় খুব অল্প হওয়ায় আমার মা সঠিক চিকিৎসা পর্যন্ত পায় না। মায়ের দুইটি কিডনী নষ্ট হয়ে অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন। এই চাকরির কারণে সংসারের হাল ধরতে পারব।’
জয়পুরহাটে যে ২৫ জন পুলিশের চাকরি পেয়েছে, তাদের সবারই গল্প কম বা বেশি এমনই। আবার এর বাইরের জেলাগুলোতে এই প্রক্রিয়ায় যাদের চাকরি হয়েছে, তাদের বেশিরভাগের গল্পও এমন হবে।
আমরা মনে করি, পুলিশের প্রতিটি স্তরে এমন স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ, বদলি এবং পদায়ন করা গেলে দেশ থেকে দুর্নীতি-অনিয়ম অনেকাংশে কমে যাবে। দ্রুতই এমন দিন আসবে, সেটাই আমরা দেখতে চাই।