শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জয়পুরহাটে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন ২৫ জন। যাদের বেশিরভাগই এতিম, রাজমিস্ত্রী, কৃষক, দিনমজুর, সিএনজি চালকসহ অসচ্ছল পরিবারের সন্তান।
রোববার তাদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে অভিনন্দন জানান জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা। কোনো প্রকার ঘুষ বা প্রভাব না খাটিয়ে চাকরি পেয়ে খুবই খুশি সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত কনস্টেবল ও তাদের অভিভাবকরা।
জানা গেছে, অনলাইনে আবেদনের পর ২২ মার্চ থেকে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে ২৫ জন নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে জয়পুরহাট জেলা পুলিশ।
সব প্রক্রিয়া শেষে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৬৮ জন মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হন ২১ জন ছেলে এবং ৪ জন মেয়ে। অপেক্ষমান রাখা হয় ৬ জনকে।
রোববার তাদেরকে স্বাগত জানানোর সময় উপস্থিত ছিলেন বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডিএসবি, মো: মোতাহার হোসেন, সিরাজগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (কামারখন্দ সার্কেল) মো: শাহীনুর কবির, জয়পুরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো: তরিকুল ইসলাম সহ অন্যান্য পুলিশ সদস্য।
কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার মির্জাপুর বড়গাছা গ্রামের মৃত মহসিন মন্ডলের ছেলে মো: আল আমিন বলেন, ‘আমি অনেক ছোট থাকতে বাবার মৃত্যু হয়। মা আবার বিয়ে করে। এরপর থেকে আমি জয়পুরহাট সরকারী শিশু পরিবারে বড় হই।’
‘‘আজ শুধু আবেদনের ফি ছাড়া কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন ছাড়াই চাকরি হলো। এটা আমার কল্পনাতেও ছিল না। এজন্য বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’’
ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর নারায়ণপাড়ার খলিলুর রহমান এর ছেলে মো. রাজু সরদার বলেন, ‘আমার বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করে। বাবার মাসিক আয় খুব অল্প হওয়ায় আমার মা সঠিক চিকিৎসা পর্যন্ত পায় না। মায়ের দুইটি কিডনী নষ্ট হয়ে অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন। এবার আমি সরকারী চাকরি করে সংসারের হাল ধরতে পারব। আমি এসপি স্যারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
কালাই উপজেলার পাঁচগ্রামের মো: মাহফুজার রহমান এর মেয়ে মোছা: আসমা খাতুন সুমি বলেন, আমার বাবা শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালায়। আমি বিনা পয়সায় চাকরি পেয়েছি ভাবতেও অবাক লাগছে। এখন আমি আমার পরিবারকে স্বচ্ছলভাবে গড়ে তুলতে পারব।’
সদর উপজেলার দড়িপাড়া গ্রামের মো: রফিকুল ইসলাম এর ছেলে রাফিক মাহবুব বলেন, ‘আমার বাবা রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। আমাদের নিজস্ব কোন জায়গা জমি নেই। আমার বাবার পক্ষে আমার লেখাপড়া ও সংসার খরচ একসাথে চালানো খুব কষ্টকর হয়ে যায়। কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন ছাড়াই পুলিশে চাকরি হওয়ার কথা আমি কখনো কল্পনাতেই আনতে পারি নাই। আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এসপি স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
পাঁচবিবি উপজেলার কুলচ্য ছাতিনালি গ্রামের মৃত মনোয়ার সরকার এর ছেলে মো. নাজমুল সরকার বলেন, ‘আমার বাবা পুলিশে চাকুরীরত অবস্থায় আসামী গ্রেফতার করতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এবার আমি বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো।’
সদর উপজেলার খঞ্জনপুর মিশনপাড়া গ্রামের শ্রী নয়ন সরকার এর মেয়ে স্মৃতি রানী সরকার বলেন, ‘আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। আমার বাবা সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। ভাই বোন সহ আমার পড়াশুনার খরচ চালাতে বাবা হিমসিম খায়। আমাকে চাকরি দেওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও এসপি স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
আক্কেলপুর উপজেলার হাস্তাবসন্তপুর গ্রামের লিটন চন্দ্র সাহা এর মেয়ে লাবনী রানী সাহা বলেন, ‘আমার বাবা অন্য ব্যক্তির মুদি দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করে আমার লেখাপড়া ও সংসার চালায়। আমাদের সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। শুধুমাত্র আবেদন ফি দিয়ে সরকারী চাকরি পাওয়ায় আমি খুবই খুশি।’
পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আমরা ২৫ জনকে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দিয়েছি। এর মধ্যে সাধারণ কোটায় ৯ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৬ জন, পুলিশ পোষ্য কোটায় ২ জন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ জন, আনসার কোটায় ২ জন, এতিম কোটায় ১ জন রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে দালাল ও প্রতারক চক্রকে দমন করার চেষ্টা করেছি এবং সক্ষম হয়েছি। সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ায় আমি ও আমার সদস্যরা অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দিত।