নাটক মানেই শহুরে তরুণ-তরুণীর প্রেম কিংবা বিরহের গল্প, এরকম একটা অর্থ তৈরী হয়ে গেছে। চলচ্চিত্রে যেমন গ্রাম বাংলার অনুপস্থিতি প্রকট, তেমনি নাটকেও। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা অডিও ভিজ্যুয়ালে গ্রাম-বাংলাকে মেলে ধরছেন নিয়মিত। তাদের মধ্যে অন্যতম গোলাম হাবিব লিটু। তার নির্মিত নাটক ও টেলিফিল্মে বেশীর ভাগ সময়-ই উঠে আসছে গ্রামীণ গল্প।
এখন পর্যন্ত প্রায় চারশো টিভি ফিকশনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার নাম। এরমধ্যে একক নাটক পরিচালনা করেছেন অন্তত ২০টি, প্রায় তিনশো’র মতো নাটকে প্রধান সহকারি হিসেবে কাজ করেছেন, ধারাবাহিক পরিচালনা করেছেন প্রায় ৫০টির মতো, সিরিয়াল করেছেন চারটি। কাজ করেছেন চলচ্চিত্রেও। প্রখ্যাত নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুলের প্রশংসিত চলচ্চিত্র ‘আধিয়ার’-এ সহকারি হিসেবে ছিলেন লিটু।
সাম্প্রতিককালে বেশকিছু নাটক ও টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছেন তিনি। এরমধ্যে বেশীর ভাগই দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে তার পরিচালনায় সর্বশেষ অভাগিনী মা, স্বপ্নের দিন, কুটুম পাখি ও ঘাসের মতো কাজগুলো টেলিভিশনের পাশাপাশি অনলাইনের দর্শকও লুফে নিয়েছেন।
তার বেশীর ভাগ কাজের প্রেক্ষাপট গ্রামীন জীবন। গ্রাম্য পরিবেশেই তিনি গল্প দেখাতে চান, কেন? এমন প্রশ্ন করা হলে চ্যানেল আই অনলাইনকে এই নির্মাতা বলেন, গ্রাম আমার ভালো লাগে, যেহেতু আমি নিজে গ্রাম থেকে এসেছি। আর সবার শিকড় তো গ্রামেই বলা চলে। আর এসব কারণে গ্রামের ভিজ্যুয়ালটা দেখাতেও সবসময় আমার ভালো লাগে।
তিনি মনে করেন, আমার মনে হয় দর্শকরাও চায় বিশেষ করে যারা প্রবাসী বাঙালি তারা ইউটিউব বা অনলাইনে এখন নাটক বেশী দেখছেন, তাদের কাছে বাংলার যেকোনো গ্রাম-ই আসলে নিজের গ্রাম, অন্তত এমনটা তারা ফিল করেন দূর দেশ থেকে। তারা পৃথিবীর যেখানেই থাকেন না কেনো, সেখান থেকে যখন বাংলার গ্রামের ছবিটা দেখেন তখন সেটি তারা নিজের গ্রাম বলেই মনে করেন বলে আমার মনে হয়।
গ্রামীণ জীবনে মুগ্ধ এই নির্মাতা আরো বলেন, সব কথার শেষ কথা হচ্ছে গ্রামের ছবি আমার নিজের কাছে ভালো লাগে, তাই আমি অন্যকেও গ্রামের সেই সুন্দর ছবি দেখাতে চাই। গ্রামের দিকে ক্যামেরা তাক করলে আমার বুক ভরে যায়। এই ভালো লাগা থেকে আমার বেশীর ভাগ নাটক, টেলিফিল্মগুলোর গল্প হয় গ্রাম নির্ভর। আমি গ্রামে গিয়ে সেগুলোর শুটিং করি।
প্রসঙ্গক্রমে কথা উঠে বর্তমান নাটক নিয়েও। এই বিষয়ে নির্মাতা লিটু বলেন, এখনকার বেশীর ভাগ নাটক ভাঁড়ামোপূর্ণ। কিন্তু আমি নাটকের মধ্য দিয়ে ১/২টা মেসেজও দিতে চাই। দেশ বা জাতিকে যদি নাটক সিনেমা বা শিল্প মাধ্যমের ভেতর দিয়ে কিছু না দিতে পারি, শিক্ষনীয় যদি কিছু না দেয়া যায় তাহলে আমার মনে হয় নাটক বা শিল্প মাধ্যম খামোখা। ব্যক্তিগতভাবে আমি ভাঁড়ামোপূর্ণ কিছু পছন্দ করি না, তাই আমার নাটকের বিষয়বস্তু ও একটু সিরিয়াস। আমি পজিটিভ কিছু দেখাতে চাই, আমার আগের নাটকগুলি যেমন ‘স্বপ্নের দিন’ বা ‘ঘাস’ এগুলোতে অসংখ্য মেসেজ আছে সমাজের জন্য। দর্শকও নাটকগুলো বেশ পছন্দ করেছেন।
আমি আধা ঘন্টা নাটক দেখলাম, হাসলাম তারপর ভুলে গেলাম আমি এরকম নাটক করতে চাই না। নাটকে একটু চিন্তাও থাকুক, এটা আমি চাই। এক একজনের দর্শন এক এক রকম কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে এই দর্শনকে ফলো করি। আমার নাটকে যদি ১০টা মেসেজ থাকে, এবংসেখান থেকে যদি একটা মেসেজও দর্শকের কাজে লাগে, তারা ইতিবাচকভাবে নেয় তাহলে এটাই আমার সার্থকতা।-বলছিলেন নাট্য নির্মাতা লিটু।
আসছে শুক্রবার (৫ জুলাই) দুপুর ৩টা ৫ মিনিটে চ্যানেল আইয়ে দেখানো হবে তার নতুন টেলিফিল্ম ‘মন্দ ভালো’। এটিও গ্রামীণ প্রেক্ষাপটকে উপজীব্য করেই নির্মিত। এতে অভিনয় করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, শতাব্দী ওয়াদুদ, নাদিয়া আহমেদ ও রওনক হাসানসহ অনেকেই।