আর অপেক্ষা নয়! সামনে ২১ অক্টোবর, একটি গ্রামের স্বপ্ন দেখবে পশ্চিম বাংলার মানুষ। গৌরের যাপনগাঁথা, সিনেমা হলে বসে দেখবে মানুষ। ভারতে ১৫ অক্টোবর হল খোলার পর মুক্তি পাচ্ছে পূর্ণ দৈর্ঘ্য ছবি ‘দুধ পিঠের গাছ’। ছবিটি দেখতে মুখিয়ে রয়েছে বাংলা সিনেমা প্রেমী মানুষের দল।
ছবি তৈরির স্বপ্নটা ছিল, লালমাটির দেশ বীরভূমের শান্তিনিকেতনের এক নির্জন রাত্রির নিবাস। তারপর সেই ছবি নির্মাণের পথ জুড়ে তৈরি হয়েছে নানা ইতিহাস। চরিত্র ও চিত্রায়নের ক্ষেত্রে বাংলা সিনেমার গতানুগতিক বাণিজ্যিক সফলতাকে ছুঁয়েও, সিনেমা প্রেমী দর্শকদের ভেতরের মহলে তুলবে নতুনত্বের ঢেউ! ভাবনার জগৎ ফিরে পাবেন, আপামর বাংলা সিনেমা প্রেমী। এটুকু আশ্বাস ছবিটি নিয়ে আছে।
ইতিমধ্যে জনগণের আওয়াজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, গণঅর্থায়ণের এই বাংলা ছবিকে। ছবি সৃষ্টির সে দীর্ঘ পথ পেড়িয়ে এসেছেন পরিচালক। এবাংলার সিনেমা তৈরির পরিবেশে প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে পরিচালক উজ্জ্বল বসু, তার নতুন ছবি নির্মাণের বিষয় করে তুলেছেন, মাধুকরীকে। যা বাংলার সাধনপথের শাশ্বত, চিরায়ত। বাংলা সিনেমার প্রযোজক হয়ে উঠেছে, নদীয়া জেলার ধানতলা থানার বাহিরগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের আড়ংঘাটা গ্রাম।
টাকার জন্য, পরিচালক উজ্জ্বল বসু, তার নতুন ছবি ‘দুধ পিঠের গাছ’ এর নির্মাণে, তিনি প্রযোজকদের দরজায় দরজায় না ঘুরে, ঘুরেছেন গ্রামের বাড়ি বাড়ি। তাই বাংলা সিনেমার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে, গ্রাম আড়ংঘাটার নাম। ছবির প্রচার, প্রসারের ক্ষেত্রেও সেই আপামর জনসাধারণই এগিয়ে এসেছে।
গ্রামের চাষি, সবজি বিক্রেতা, মাস্টার, রিকশাওয়ালাসহ সমস্ত স্তরের মানুষ এগিয়ে এসে, ‘দুধ পিঠের গাছ’ ছবিটির নির্মাণে হাত লাগিয়েছেন। শুধু অর্থ দিয়েই নয়, ছবির শুটিং চলাকালীন গ্রামের প্রতিটি বাড়ি ছিল, অভিনেতা, অভিনেত্রী ও কলাকুশলীদের নিজেদের বাড়ি। উজ্জ্বল বসুর চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ক্রাউড ফান্ডের এই ছবিতে নদীয়া জেলার ছোট এই সিনেমাপ্রেমী গ্রাম আড়ংঘাটার ৯৩০ টি পরিবারের, ২৭,০০০ মানুষ, ২২ লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছেন ছবিটির নির্মাণে। শুধু তাই নয় ছবি মুক্তিপর্বেও বীরভূমের কয়েকটি গ্রামের মানুষের সাহায্যই পথ তৈরি করেছে।
উজ্জ্বল বসুর এই ‘দুধ পিঠের গাছ’ ছবিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, এক গাঁয়ের ছেলে গৌরের জীবন ও তার উত্তরণের যাত্রাকে। তাকে ঘিরেই ছবির কাহিনি এগিয়েছে। গৌর এর বয়স সাত বছর। বাক শক্তির প্রতিবন্ধকতায়, সে এখনও ভালো করে কথা বলতে পারে না। গৌরের চঞ্চলতা আর দূরন্তপনায় ভরা শৈশব। গৌরের শিশুমন বিশ্বাস করে, আম, জাম, কাঁঠালের মতো পিঠেরও গাছ হয়। সে বিশ্বাসেই সে মাটিতে পুঁতে রাখে পিঠে, নিয়মিত জল দেয় আর অপেক্ষা করে এবুঝি পিঠের গাছ বের হবে। এক সময় সে নতুন দেশের সন্ধান পায়। ঈশ্বরের দেশ! সেখানকার বাগানে নাকি, নানা রকম পিঠের গাছ আছে। কল্পনায় শিশুমন উড়ে যেতে চায়। সে সময় তাদের বাড়িতে আসে গৌরের দিদা। সে কাশী যাওয়ার আগে দেখা করতে আসে। গৌর তার কাছেও পিঠে গাছের কথা শোনে। একদিন দিদার ট্রেন ধরতে যাওয়ার পথে, গৌরও লুকিয়ে পেটে ব্যথার গল্প বলে স্কুল পালিয়ে এসে ট্রেনে চাপে। এবার শুরু হয় গৌরের নতুন জার্নি।
ছবির বেশির ভাগ শুটিং হয়েছে আড়ংঘাটা গ্রাম ও তার আশপাশের গ্রামে। ছবির সংগীত পরিচালক জয় সরকার, নেপথ্য কণ্ঠে অনাথবন্ধু ঘোষ। ছোট্ট গৌরের ভূমিকাতে অভিনয় করেছেন হার্সিল দাস, দামিনী বেণী বসু, কৌশিক রায় ও শিবানী মাইতিরা যেমন অভিনয় করেছেন, তেমনই গ্রাম আড়ংঘাটার সাধারণ মানুষরাও করেছেন অভিনয়। এভাবেই বাংলা সিনেমার ইতিহাসে জড়িয়ে গেছে আড়ংঘাটা গ্রামের নাম।