চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

গ্যাসের দাম একবারে এতো বাড়ানো কতোটা যৌক্তিক?

ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম আবারও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, যা আজ (জুলাই ১) থেকে কার্যকর হয়েছে। নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী গৃহস্থালিতে ব্যবহারের জন্য প্রতিমাসে গ্রাহকদের এক বার্নার চুলার জন্য গ্যাসের দাম ৯২৫ টাকা ও দুই বার্নার চুলার জন্য ৯৭৫ টাকা গুনতে হবে। এছাড়া মিটারযুক্ত চুলার জন্য প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ টাকা ৬০ পয়সা। আর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হোটেল ও রেস্টুরেন্টের জন্য প্রতি ঘনমিটার ২৩ টাকা এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ঘনমিটার ১৭ টাকা ৪ পয়সা। এছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ব্যবহৃত সিএনজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো কমিশনের কাছে গড়ে ১০২ ভাগ গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। পরে মার্চ মাসে গণশুনানি করে কমিশন। শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে দামের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম অনুযায়ীই রোববার বিকেলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা এলো। এই গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে জনগণের কাছ থেকে সরকারের অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে ৮ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। বিষয়টি নিয়ে দেশের গ্যাসের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে ৭ জুলাই হরতাল ডেকেছে বাম জোট।

জুলাই ১ থেকে দেশে যখন গ্যাসের বাড়তি দাম কার্যকর হয়েছে, ওই একইদিনে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম কমে যাওয়ায় গ্যাসের দাম কমিয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। দেশে বিগত কয়েক দশকে বিভিন্ন সময়ে গ্যাস খাতে সরকারের ব্যাপক লোকসান হলেও সাম্প্রতিক সময়ে সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। গত পাঁচ বছরে গ্যাসের দাম বেড়েছে একাধিবার। উচ্চমূল্যে গ্যাস বিক্রির ফলে বর্তমানে দেশের অন্যতম লাভজনক খাতের একটি জ্বালানী খাত। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পেট্রোবাংলা ও এর অধীন প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের কোষাগারে ৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকা জমা দিলেও সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছর এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। দুই বছরের ব্যবধানে আয় দ্বিগুণ হওয়ার পরও নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে জনগণের প্রশ্ন করাটা স্বাভাবিক নয় কি? তাছাড়া যে গ্যাস ভারত বিশ্ববাজার থেকে ৬ ডলারে কেনে, সেই একই গ্যাস বাংলাদেশ কেনো ১০ ডলারে কেনে, এ বিষয়ে হাইকোর্ট কিছুদিন আগে এক রিট শুনানির সময় পেট্রোবাংলা ও কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছে। এই বিষয়টিও উদ্বেগজনক।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘মূলত এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির কারণে সৃষ্ট আর্থিক ঘাটতি মেটাতেই এই দাম বাড়ানো হয়েছে।’ বেশি দামে এলএনজি কিনে কম দামে বিক্রির কারণে আগামী অর্থবছরে আর্থিক ঘাটতি দাঁড়াবে ১৮ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে দুই হাজার ৪২০ কোটি টাকা, সরকার থেকে ৭ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা এবং গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত ৮ হাজার ৬২০ কোটি টাকাও যোগ হবে।

পরিস্থিতি যাইহোক, ৫-৬ বছরের মধ্যে দুই-তিনবার গ্যাসের দাম বাড়ার ফলে জনজীবনে যে প্রভাব, তা জনগণকে যে ক্ষতিগ্রস্ত করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একেবারে ৮ হাজার ৬২০ কোটি টাকার বাড়তি বোঝা না চাপিয়ে সহনীয় মাত্রায় ধীরে ধীরে তা বাড়ানো যেতো বলে আমরা মনে করি। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর সংস্কার, আধুনিকীকরণ না করা গেলে এবং নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কার না করলে সামনের দিনগুলিতে এলএনজি আমদানি দেশের অর্থনীতিতে আরও চাপ বাড়াবে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। ঐতিহাসিক সমুদ্র জয়ের পরে বাংলাদেশের সমুদ্র-সীমায় চিহ্নিত ২৬ টি ব্লকের মধ্যে মাত্র চারটি ব্লকে গ্যাস উত্তোলনের কাজ খুব ধীর গতিতে চলছে, বাকি ২২টি ব্লক খালি পড়ে আছে বলে পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে। এসব দিকেও নজর দেয়া জরুরি।

আমাদের আশাবাদ, সংশ্লিষ্টরা বিষয়গুলো নজরে এনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন, যাতে করে জনগণের উপরে বাড়তি চাপ না পড়ে।