চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

গোলাপি বলে ‘মনোযোগ’কেই পরীক্ষা মানছেন মুমিনুল

বাংলাদেশ-ভারত দিবা-রাত্রির টেস্ট শুরু শুক্রবার

ব্যাটিং সক্ষমতায় ঘাটতি নাকি মনোযোগ আর ধৈর্যে আছে স্বল্পতা? ইন্দোর টেস্টের পর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে এ প্রশ্ন সবার। উত্তর মেলার আগেই দরজায় কড়া নাড়ছে ইডেনে গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট। যাতে পাস করতে ইন্দোরে ভুলে যাওয়া ‘মনোযোগ’কেই টোটকা মানছেন টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হক।

‘আসল চ্যালেঞ্জটা হবে কৃত্রিম আলোর নিচে। বলের যে উজ্জ্বল ভাবটা থাকে সেটা আলোর কারণে হয়তো ব্যাটসম্যানদের একটু সমস্যায় ফেলবে। ফিল্ডিংয়েও হয়তো সমস্যা হবে। ব্যাটসম্যানদের জন্য যে সমস্যা হবে তা হল, কোনো কারণে যদি একশভাগ মনোযোগ না থাকে সেক্ষেত্রে। আমার মতে একশভাগ মনোযোগ রাখা জরুরী।’ ইন্দোরে কৃত্রিম আলোয় বাড়তি দুদিন অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই মুমিনুল বলছেন কোথায় নজর দিতে হবে ব্যাটসম্যানদের।

ইন্দোর টেস্টের আগে থেকেই ইডেনের গোলাপি বলের টেস্ট নিয়ে হইচই শুরু। মাঝখানে ইন্দোরের ম্যাচ হয়ে গেছে। যাতে বাংলাদেশ তিনদিনে টেস্ট হেরেছে ইনিংস ও ১৩০ রানের ব্যবধানে। এমন হার নিয়ে কথা থাকলেও আপাতত সব রোমাঞ্চ ইডেনের ঐতিহাসিক টেস্টকে ঘিরেই। ম্যাচটা যে সিরিজ নির্ধারণী হতে চলেছে তাতেও কারোরই মনোযোগ নেই যেন! সব মনোযোগ গোলাপি বলের দিকে। শুক্রবার দুপুর দেড়টায় মাঠে গড়াবে ব্যাট-বলের রোমাঞ্চ।

তার আগে অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে, আক্ষরিক অর্থেই ম্যাচ-খেলোয়াড়দের চেয়ে সমস্ত মনোযোগ গোলাপি বলকে নিয়েই। বাংলাদেশ-ভারতের খেলোয়াড়দের জন্য এই মনোযোগ তো আরও বেশি প্রযোজ্য। কারণ, দুদলে এমন অনেক খেলোয়াড় আছেন গোলাপি বলে যারা প্রথম অনুশীলন করেছেন এ সিরিজে এসেই।

গোলাপি বলের আচরণ কেমন? ব্যাটসম্যান নাকি বোলারদের সুবিধা দেয় বেশি? কোন সময় বেশি কার্যকর? এমনসব প্রশ্ন কলকাতার আকাশে বাতাসে। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য একবিন্দুতে এসে মিলে যাচ্ছেন। বলছেন, গোধূলিলগ্নে এসে ব্যাটসম্যানদের বিষাক্ত ছোবল মারতে পারে টুকটুকে গোলাপি বল। মুমিনুলও ম্যাচের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে দৃষ্টি টানলেন সেদিকে।

টাইগার ক্রিকেটারদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাতে ইডেনে হাজির থাকবে ৬০ হাজারেরও বেশি দর্শক! যেখানে বাংলাদেশিদের সংখ্যাটা হতে পারে সাকুল্যে ৭ হাজার। সবাই হাজির হচ্ছেন ঐতিহাসিক এক টেস্টের সাক্ষী হতে। ম্যাচটি নিয়ে আয়োজনের জমকালো মঞ্চ সাজিয়েছে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (সিএবি)। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী আমন্ত্রিত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন ভারতের সাবেক অধিনায়কদের সবাই। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে খেলা সদস্যরা, আর ওই ম্যাচের ভারতীয় ক্রিকেটাররাও থাকবেন।

সেই উত্তেজনায় অবশ্য গা ভাসানোর সুযোগ নেই মুমিনুলদের। মাঠে আসল কাজের ভারটা যে তাদেরই হাতে। ২২ গজের বাইরে কী হচ্ছে সেটা নিয়ে তাই মাথা ঘামাতে চান না বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘দিনশেষে ওই ক্রিকেটই খেলতে হবে। হয়তো শুরুতে একটু উত্তেজনা থাকবে যে গোলাপি বলটা কেমন আচরণ করে তা নিয়ে। একটু চিন্তা থাকবে। মাঠের বাইরে যে উত্তেজনা তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। আমাদের চিন্তা মাঠের খেলা নিয়ে।’

‘আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে দর্শক থাকলেই। মনে হয় না এটা কোনো চাপ হবে। হয়তো কৃত্রিম আলোতে একটু চাপ হবে। এই পর্যায়ে এসে সবারই চাপ নেয়ার মতো সামর্থ্য আছে বলে মনে হয়।’

ইডেনের অগ্নিপরীক্ষার আড়ালে কঙ্কাল হয়ে উঁকি দিচ্ছে ইন্দোর ম্যাচের ফল। সেই ম্যাচকে একটা ভুল ধরে নিয়েই ভুলে যেতে চান মুমিনুল। চাইছেন ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ইডেনে নিজেদের মেলে ধরতে, ‘আগে কী হয়েছে, ভালো নাকি খারাপ, তা নিয়ে ভাবতে পারবেন না। খারাপটা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের ম্যাচের দিকে নজর দিতে হবে। আমিও সেটাই করি, ভুলটা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের ম্যাচে তা ব্যবহারের চেষ্টা করি।’

ভুলে যেতে চাইলেও আগের টেস্টে তিনদিনে বাংলাদেশের যে হাল হয়েছিল সংবাদকর্মীরা সেটা মুমিনুলদের ভুলতে দিলেন কই! সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে তিনদিনের প্রসঙ্গ উঠতেই হেসে ফেলেন টাইগার অধিনায়ক, ‘একজন টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে তো বলতে পারি না যে টেস্টটা তিনদিনে শেষ হবে। স্পোর্টিং উইকেট হলে ভালো হত।’