২০০৯ সালে প্রথম সিনেমা ‘মনপুরা’ নির্মাণ করেই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। সেসময় ছবিটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করে শহর, গ্রাম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ। ছবিটি সুপার হিটের তকমাও অর্জন করে। প্রথম ছবির প্রায় ৯ বছর পর নতুন সিনেমা নিয়ে হাজির গিয়াসউদ্দিন সেলিম। এবার যেনো আরো পরিণত।
ছবির নাম ‘স্বপ্নজাল’। শুধু তরুণ-তরুণীর প্রেম নয়, নব্বই দশকের দুই তরুণ-তরুণীর প্রেমের গল্প ছাপিয়ে পুরো গল্পে উঠে আসে এক খণ্ড বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি! একটি নিখাদ প্রেমের গল্পের আড়ালে গাঁথা থাকে সংখ্যালঘুর উপর সংখ্যাগুরুর চাপ, দখল, দ্বন্দ্ব, সংঘাত, মানসিক টানাপোড়েন আর সামাজিক বাস্তবতা। ছবিটি মুক্তির পর অবশ্য অনেকে ‘মনপুরা’র সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন, কেউ কেউতো ছবিটিকে ‘মনপুরা ২’ বলেও মন্তব্য করেছেন।
তবে নির্মাতার সোজা সাপ্টা জবাব: সবাই সবার মতো করে দেখছে। সবার মতো করে ভাবছে। সবাই সবার মতো বিচার করছে। এতে আমার কিছু বলার নেই। বরং ছবিটি যে সবার কাছে প্রশংসা পাচ্ছে এতেই আমার ভালো লাগা।
এটুকুই! ‘মনপুরা’র সাথে ‘স্বপ্নজাল’-এর কোনো মিল নেই? হ্যাঁ, মিল আছে। এতো মোচড় ঘুরে এসেও দুটোই শেষ পর্যন্ত প্রেমের ছবি। এছাড়াও আছে কিছু মিল!
সেটা কী?
‘মনপুরা’ ও ‘স্বপ্নজাল’ দুটি ছবির বেশীর ভাগ জুড়েই আছে জলধারা– বয়ে যাওয়া নদী, নদী ঘিরে জীবন ! ইচ্ছে করেই কি তিনি জলে পুরো গল্পের জাল বুনেন? এমন প্রশ্ন রাখা হয়েছিলো নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের কাছে।
‘মনপুরা’ ছবির ভিত গড়ে উঠে নদী পাড়ে। সেখানকার মানুষ, মানুষের যাপিত জীবন– এসবই উঠে এসেছে ছবিতে। সোনাই ও পরীর প্রেম। প্রভাবশালী গাজীর বাড়ি, ব্যবসা, পরীর দরিদ্র জেলে বাবার হাপিত্যেস সবই জল পাড়ের কাহিনী। এমনকি খুনী ছেলের দায় সোনাইয়ের উপর চাপিয়ে তাকে মনপুরা দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো, এ সবই জল জীবনকে কেন্দ্র করে। ‘স্বপ্নজালে’ও হয়নি তার ব্যতিক্রম। আছে জলের আধিক্য!
নদী তীরবর্তী মানুষের গল্প ‘স্বপ্নজাল’। অপু-শুভ্রার প্রেমের মধ্য দিয়ে মূলত এই ছবিতেও নির্মাতা জলপাড়ের এক মফস্বল শহরের বা আধা মফস্বল শহুরে মানুষের গল্প বুনেছেন। যাদের চলাচলের একমাত্র যান লঞ্চ কিংবা নৌকা! এমনকি মনপুরার সোনাইয়ের মতো এই ছবিতেও শুভ্রার বাবা হিরন সাহা চরিত্রটিকে নির্বাসনে পাঠানো হয় নদী ঘেরা একটি দ্বীপে।
‘মনপুরা’ থেকে ‘স্বপ্নজাল’– ৯ বছরের দীর্ঘ জার্নিতেও তিনি ‘জল’কে ভুলেননি! শোনা যাচ্ছে, শিগগির এই নির্মাতা শুরু করতে যাচ্ছেন তার তৃতীয় ছবি ‘অপারেশন জ্যাকপট’। মুক্তিযুদ্ধ নির্ভর কাহিনি অবলম্বনে এই ছবির বিশাল অংশজুড়েও থাকবে জল! নির্মাতার প্রতি তাই প্রশ্ন ছিলো, জলের প্রতি এই মুগ্ধতা কেনো?
বরাবরের মতো গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সোজা সাপ্টা উত্তর: পানিইতো সব। পলি আর বালি মিলে এই জনপদ তৈরি হয়েছে। জনপদের সমস্ত সভ্যতা, নগর, গঞ্জ, গ্রাম সবই কিন্তু নদীর পাড় কেন্দ্রিক, জল কেন্দ্রিক। আর এই জনপদ এবং এই জনপদের মানুষের গল্প নিয়ে যখন আমি সিনেমা করতে যাবো, তখনতো এগুলো আসবেই। অস্বীকার করার কিছু নাই। আমার গল্পের বড় অংশ জুড়ে তাই জলের একটা প্রভাব থাকে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে ‘স্বপ্নজাল’-এর শুটিং শুরু হয়। কলকাতায়ও কিছু অংশের দৃশ্যায়ন হয়েছে। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন পরীমনি ও ইয়াশ রোহান। বেঙ্গল ক্রিয়েশন্স ও বেঙ্গল বার্তার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘স্বপ্নজাল’ এর কাহিনী ও চিত্রনাট্য করেছেন নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম নিজেই। ছবিতে পরী-রোহান ছাড়াও অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, ফজলুর রহমান বাবু, শাহানা সুমী, শহিদুল আলম সাচ্চু, শিল্পী সরকার অপু, ইরফান সেলিম, ফারহানা মিঠু, ইরেশ যাকের, মুনিয়া, শাহেদ আলী, আহসানুল হক মিনুসহ অনেকে।