কক্সবাজার রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তিনি আর দশজন চেয়ারম্যানের মতো নয়, তার আচরণে নেই কোনো দম্ভ, চালচলনে নেই কোনো জৌলুস। এলাকার জনসেবা ও দায়বদ্ধতাকে বরণ করে তিনি ব্রিজের কাছে বাঁধা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম অালোচিত হয়েছেন। কোনো মন্দ কাজের জন্য না, আলোচিত হয়েছেন একটি ব্রিজ রক্ষার আন্দোলনের জন্য। কক্সবাজারে বন্যার পানিতে গর্জনিয়া ব্রিজ রক্ষার জন্য দিন-রাত এলাকার মানুষদের সঙ্গে কাজ করছেন। এমনকি খাওয়া-দাওয়া ও ঘুম সবই ওই ব্রিজের নীচে। তার এই কাজ দেখে অনেকে বলেছেন, এমন নেতা পাওয়া কঠিন।
সেই চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, নির্বাচনের সময় এলাকার মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম গর্জনিয়া ব্রিজটি ঠিক করে দেবো। যদি ব্রিজটি ঠিক করতে না পারি, তাহলে নিজের দায় নিয়ে একবছরের মধ্যে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়াবো। আমার প্রতিশ্রুতিতে তো জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছে। জনগণের কাছে নিজের দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ব থেকে এই কাজগুলো করছি, কোনো প্রচারের জন্য নয়। তার কারণ তাদের দেয়া কথা না রাখতে পারলে এই চেয়ারম্যান পদে থাকার যোগ্যতা আমার নেই।
তিনি আরও বলেন, ২০১৫ সালে স্রোতের ধাক্কায় গর্জনিয়া ব্রিজটির দক্ষিণ পাশের প্রায় ৪০০ ফুট দীর্ঘ সংযোগ সড়ক বিলীন হয়ে যায়। তারপর থেকে দেড় বছর ওই ব্রিজ দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে কক্সবাজার ও বান্দরবানের পাঁচটি ইউনিয়নের ৩ লাখের মতো মানুষকে। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বিলীন সংযোগ সড়কটি নির্মাণে এগিয়ে আসেন স্থানীয় সাংসদরা। তবে বন্যার পানিতে ব্রিজটি আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ব্রিজের নীচে অবস্থানের কারণে প্রশাসনের দৃষ্টি এই ব্রিজে পড়েছে বলেও জানান তিনি।
‘এলাকার হাজারো মানুষ গর্জনিয়ার ব্রিজটি রক্ষার জন্য আমার সঙ্গে দিন-রাত কাজ করছে। অামরা চাই গর্জনিয়া ব্রিজটি টিকে থাক। সবচেয়ে বড় কথা এলাকার নারীরা এই ব্রিজটি রক্ষার জন্য রোজা রেখে দোয়া করছেন।’
চেয়ারম্যান হয়ে ব্রিজের নীচে থেকে জনগণের জন্য কাজ করা নজরুল ইসলাম বলেন, একজন চেয়ারম্যানের কাজ হচ্ছে দেশে ও জনগণের সেবা করা। তাদের পাশে থাকলে যে কোনো কাজে আমার পাশে তারা দাঁড়াবে, সাহস দেবে। এখানে কাজটাই মূখ্য। চেয়ারম্যান হয়েছি বলে কোনো অহংকার আমার মধ্যে কাজ করে না। বরং জনগণকে কথা দেওয়া ব্রিজটি রক্ষা করতে পারছি এতেই আমার আনন্দ।
সাম্প্রতিক বন্যায় ব্রিজটির আরও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে ব্রিজটি একার পক্ষে রক্ষা করা সম্ভব নয় জানিয়ে জেলা প্রশাসন ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্রিজটি রক্ষার জন্য সাহায্য কামনা করেছেন এই ব্যতিক্রমি চেয়ারম্যান।