জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালাচ্ছে। গণহত্যা চালানোর দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মিয়ানমার সরকারের বিচার হওয়া উচিত।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন। এর আগে রোববার তিনি উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে রোহিঙ্গাদের সাথে বলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান আরো বলেন, মিয়ারমার সরকার নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে। ঘুমন্ত মানুষের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। নারীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। বাড়ি অগ্নিসংযোগ করে লুটপাট চালাচ্ছে এই বর্বরতা সভ্য ইতিহাসে ব্যতিক্রম। পৃথিবীর কোনো দেশ, জাতি তা দেখেনি।
তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে অনেক রোহিঙ্গার সাথে কথা বলেছি। তারা যেভাবে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন তা অত্যন্ত ভয়াবহ। তাদের কথা থেকে অনুমান করে মিয়ানমারের এই নির্যাতনকে গণহত্যার শামিল বলে অভিহিত করছি।
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মিয়ানমারের এই নির্যাতনের কথা জাতিসংঘ, ইইউ, আরবলীগসহ আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। তাদেরকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চিঠিও দেয়া হয়েছে। এতে বিশ্ব বিবেক নাড়া দিয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক মহল থেকে মিয়নমারের উপর চাপ প্রয়োগ হচ্ছে। তারপরও তারা নির্যাতন চালাচ্ছে। তাই বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার চিন্তা করছে।
তিনি আরো বলেন, নতুনভাবে তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। সব মিলে এখন পর্যন্ত ৭/৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। আসার অপেক্ষায় আরো অনেক রোহিঙ্গা। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সরকার, বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ মানবিক সহযোগিতা করছে।
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের বোঝা উল্লেখ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ জনসংখ্যা বহুল। তার উপর ৭/৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা আমাদের জন্য সমস্যা হচ্ছে। জীবন বাঁচানো হচ্ছে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার। বাংলাদেশ সরকার তাই রোহিঙ্গাদের ঠাঁট দিয়েছে।’
তিনি বলেন, মিয়নমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। তারা না নিলে জাতিসংঘ, ওআইসি ও আসিয়ান এগিয়ে আসুক। তাদেরকে রোহিঙ্গাদের নিতে হবে। মিয়ানমার আসিয়ানের সদস্য। আসিয়ান চাপ প্রয়োগ করলে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে। এতে আসিয়ানের সদস্য ভারত ও চীন বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
মিয়নমার উন্নত দেশ উল্লেখ করে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মিয়নমার অনেক উন্নত দেশ। তাদের উন্নতি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মায়নামারে বিনিয়োগ করছে। মিয়নমার রাখাইন রাজ্যকে বিশেষ অঞ্চল হিসেবে বিদেশীদের দিতে চাচ্ছে। তাই রোহিঙ্গাদের নিধন করে রাখাইন রাজ্য খালি করার চেষ্টা। এর মধ্যে রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে গঠিত কফি আনান কমিশন গত ২৪ আগষ্ট তাদের প্রতিবেদন মিয়ানমার সরকারের হাতে তোলে দেয়। প্রতিবেদনটি রোহিঙ্গাদের পক্ষে হয়েছে। তাই রোহিঙ্গাদের তাড়াতে পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা নিধন করা হচ্ছে বলে দাবি করেন কাজী রিয়াজুল হক।
“রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জঙ্গি গোষ্ঠী গড়ে উঠার কারণ হচ্ছে নির্যাতন। শিক্ষা, চিকিৎসাসহ তাদের সব ধরণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে মিয়নমার সরকার। তাই দীর্ঘদিনের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রোহিঙ্গারা প্রতিরোধ গড়তে বিভিন্ন গোষ্ঠী গড়ে তুলেছে।” এমন অভিমত জাতীয় মিনবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকের।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নুরুন্নাহার ওসমান ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক আনোয়ারুল নাসের। এতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।