চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘গণমাধ্যমের শক্তি বাড়ছে, নিয়ন্ত্রণও বাড়ছে’

ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

এমিরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী  বলেন: গণমাধ্যমের শক্তি বাড়ার সাথে সাথে এর উপর নিয়ন্ত্রণও বাড়ছে। 

বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৫৬ বছর পূর্তিতে আয়োজিত ‘বিভাগীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও বৃত্তি প্রদান-২০১৮’ অনুষ্ঠানে ‘গণমাধ্যম, সমাজব্যবস্থা ও গণমানুষের মুক্তি’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

সিরাজুল ইসলাম বলেন: সংবাদপত্রে বর্তমানে পুঁজিবাদী নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। সংবাদপত্রে রঙিন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুঁজিবাদীরা এ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়াও সংবাদপত্রের মালিকপক্ষের লোক সরকারবাদী হলে নীরব একটা নিয়ন্ত্রণ চলে। অর্থাৎ পূর্বের ন্যায় এখনও নিয়ন্ত্রণ চলছে।

তিনি বলেন: দেশে যত নৈরাজ্য চলছে, তার পিছনে পুঁজিবাদীদের হাত রয়েছে। এজন্য সামাজিক মালিকানা দরকার। কিন্তু তা সহজ নয়। মালিকের সুবিধার জন্যে সাংবাদিকরা অনেক কিছু করতে পারছেন না। অন্যদিকে, সাংবাদিকরাও কিছু সুবিধা পান। এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কারণে সাংবাদিকরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। অতীতে সাংবাদিকরা সংঘবদ্ধ ছিলেন।

তিনি বলেন: বর্তমানে সংবাদপত্রে মতামত দেয়ার মাধ্যমে মানুষের সাথে যোগাযোগ হলেও তা এক প্রকার ‘ছায়া যোগাযোগ’। সত্যিকারের সামাজিক যোগাযোগ সেখানে হয় না।

অন্যদিকে, সংবাদপত্রে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে গেলেও ৫৭ ধারার মতো আইন কণ্ঠরোধ করে। ফলে জনসভা বা মিছিল-মিটিংয়ে যে সামাজিক যোগাযোগ হয়, তা এখন সংবাদপত্রে হয় না।

ছাত্র সংসদের অনুপস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক চর্চা কমে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক জ্ঞান সৃষ্টি করে। কিন্তু জ্ঞানের চাঞ্চল্য আমরা তৈরী করতে পারছি না।

‘‘এর কারণ হলো ২৮ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নেই। আগে যখন ছাত্র সংসদ ছিলো, তখন তাদের উদ্যোগে বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। শিক্ষার্থীরা কোন অনুষ্ঠানে যাবে ঠিক করতে পারতো না, এত অনুষ্ঠান হতো। কিন্তু বর্তমানে ছাত্র সংসদের অভাবে শিক্ষার্থীরা উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ায়।’’

গণমাধ্যমের কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন: সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগের সাথে যারা আছেন, তারা সাম্যের বাণী সমাজে ছড়িয়ে দেবেন। সামাজিকবিজ্ঞান নিয়ে পড়লেও মানববিদ্যার ধারণা রেখে আপনাদের মানবতাকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিভাগের শিক্ষার্থী উপদেষ্টা ও সহকারী অধ্যাপক শবনম আযীম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আখতারুজ্জামান মানব কল্যাণ ও সত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করার জন্য গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন: অসত্য সংবাদ সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এতে প্রতিষ্ঠান ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

‘গণমাধ্যম, সাংবাদিকতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক দর্শন এক ও অভিন্ন’ উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ জ্ঞান সৃষ্টি ও সত্য উদঘাটন করা। গণমাধ্যমও সত্য উদঘাটনে কাজ করে। মানব কল্যাণ সাধনই উভয়ের লক্ষ্য। মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে গণমানুষের চাহিদা মেটাতে স্ব স্ব অবস্থান থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে ‘তাজিন স্মৃতি বৃত্তি’ ‘অধ্যাপক তৌহিদুল আনোয়ার বৃত্তি’ এবং ‘নভেরা-দিপিকা বৃত্তি’ প্রদান করা হয়। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন : রাগীব রহমান এবং ইসরাত জাহান প্রমি। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিভাগের প্রাকটিস জার্নাল ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন উপাচার্য আখতারুজ্জামান।

সভাপতির বক্তব্যে কাবেরী গায়েন বলেন: গণমাধ্যম যেন গণমানুষের হয়ে ওঠে এটিই আমাদের মূল স্বপ্ন। যারা এই বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে বের হবেন, তারা আমাদের এই স্বপ্ন পূরণ করবেন বলে আশা করি।

অনুষ্ঠানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কাছে মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম ল্যাব এবং বিভাগীয় রেডিও ও টেলিভিশন স্টেশন প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে থেকে এক বর্নাঢ্য র‌্যালীর মাধ্যমে বিভাগ দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়। র‌্যালীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান, বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ চালু হয় ১৯৬২ সালে। প্রথমে এর নাম ছিল সাংবাদিকতা বিভাগ এবং তখন এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স পড়ানো হত। ১৯৬৮ সালে ডিপ্লোমা কোর্সের সাথে দুই বছর মেয়াদী মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। ১৯৭৮ সালে তিন বছর মেয়াদী স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু হয়। বর্তমানে চার বছর মেয়াদী সম্মান কোর্স চালু আছে। বৈশ্বিক পর্যায়ে এবং বাংলাদেশেও মুদ্রণ ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রসারের সাথে সাথে এই বিভাগের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। প্রতিবছর এই বিভাগে ৭০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তত্ত্বীয় অনেক কোর্সের পাশাপাশি ভিডিও, ফটোগ্রাফি ও ডিটিপির মত কারিগরী অনেক কোর্সও এখানে চালু আছে।