বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক বলেছে, এটা কমিয়ে আনতে হবে। খেলাপি ঋণ বাড়লে টেকসই উন্নয়ন হবে না।
মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফ্যান, প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রমুখ।
চিমিয়াও ফ্যান বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.১, ৭.২, ৭.৬ এগুলো নিয়ে বিতর্ক ইউজলেস। দেখতে হবে, জিডিপির এই গ্রুাফটা কোথায় ইমপ্যাক্ট করে। বেকারত্ব দূর হচ্ছে কি না, দারিদ্র দূর হচ্ছে কি না। টেকসই উন্নতি হচ্ছে কি না। জিডিপির প্রবৃদ্ধি বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে কি না।
খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সংস্থাটি বলছে, এ ঋণ পুনঃতফসিলের কারণে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাবে। এতে চাপ বাড়বে বাজেটে। এজন্য আর্থিক খাতে সংস্কার আনতে হবে। খেলাপি ঋণের দিকে নজর দিতে হবে। এই মুহূর্তে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪ শতাংশে।
বিশ্বব্যাংক জানায়, ৬ টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মোট ঋণের ৪৮ শতাংশই খেলাপি ঋণ। এছাড়া, ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের বড় অংশই খেলাপি ঋণ।
এক প্রশ্নের জবাবে চিমিয়াও ফ্যান বলেন, নির্বাচনে ব্যবসার পরিবেশ যেন খারাপ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনিশ্চিত পরিবেশে কেউ ব্যবসায় আসবে না। বিনিয়োগ পরিবেশ যেন থাকে সেটা নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ খাতে জোর দিতে হবে জানিয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ২০১১-২০১৭ সাল পর্যন্ত ৪৭ শতাংশ মানুষ নতুন করে বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। এ সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে ৮০ শতাংশ। ২০৩০ সালের বিদ্যুতের চাহিদা মোকাবিলায় এখন থেকেই উৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের লিড অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ইদানীং বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সাসটেইনিবিলিটি অ্যানালাইসিস করেছে, তাতে দেখা যায় এখনও জিডিপির অনুপাতে অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্ব থেকে নেয়া বাংলাদেশের যে ঋণ, তা খুব একটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যাওয়ার আশঙ্কা কম।
‘তবে ঝুঁকি আছে যদি রপ্তানি বাজার স্লো ডাউন হয়। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকাতে। এছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেখানে যদি কোনও ধরনের বাধা তৈরি হয়, তবে অগ্রযাত্রা ঝুঁকিতে পড়বে।’
বিশ্বব্যাংক জানায়, বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়ন করছে। উন্নয়ন ধরে রাখতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। রপ্তানি ও রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি যেন কমে না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। বিশ্বের ১০টি উদীয়মান দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এজন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।
তবে এই জন্য কিছু সংস্কারের প্রয়োজন আছে। সেইসঙ্গে স্থিতিশীলতার প্রয়োজন রয়েছে। এর জন্য স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন সংস্কারের প্রয়োজন।