নতুন মাদক ‘খাত’ সেবনের কিছু কুফল তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর প্রভাবে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। পাশাপাশি সেবনকারী জটিল মানসিক রোগে ভুগতে পারে। এমনকি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণও হারানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন রুট ব্যবহার করে আসা নতুন মাদক ‘খাত’ ইয়াবার (মেথাএমফিটামিন) মতোই স্টিমুলেন্ট ড্রাগ।
গত ৩১ আগস্ট বিমানবন্দর থেকে ৮৬১ কেজি এনপিএস বা খাত উদ্ধারের কথা জানিয়েছিল মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
এর ঠিক ১০ দিন পর জিপিও বৈদেশিক পার্সেল শাখা থেকে ৯৬ কার্টনে ভর্তি ১ হাজার ৫’শ ৮৬ দশমিক ৩৬ কেজি খাত উদ্ধার করে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম টিম।
‘খাত’ মানবদেহের জন্য কতোটা ক্ষতিকর জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ঝুনু শামসুন নাহার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ইথিওপিয়া ও সোমালিয়ার যেসব দেশে এই মাদকটি প্রচলিত আছে তারা পার্টি ড্রাগ’ হিসেবে ব্যবহার করে। এরফলে খাতের প্রাকৃতিক স্টিমুলেটিং উপাদান মুহূর্তেই সেবনকারীকে চাঙ্গা করে তোলে। ওই দেশগুলোতে সামাজিকভাবে অনুমোদিত।
খাতের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু ইয়াবার মেথাএমফিটামিনের মতোই স্টিমুলেন্ট ড্রাগ তাই মানব দেহের জন্য এটা ভয়ংকর ক্ষতিকারক। ইয়াবাতে যেমন এমফিটামিন ও ক্যাফেইন রয়েছে ঠিক খাতেও এ উপাদানগুলো রয়েছে। যখন চা হিসেবে খাত মানবদেহে যাবে সেটা ইয়াবার মতোই সেবনকারীর দেহকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।
‘শুধু খাতের পাতা খেলে ভয়ংয়র প্রভাব পড়তে দেরি হবে, যখন সেটা চায়ের মতো খাওয়া হবে; তখন মানবদেহে দ্রুতই ক্ষতি সাধন করবে। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকলাপ বিঘ্নিত হবে। বিভ্রান্ত হবে, চিন্তাধারার পরিবর্তন বা বিকৃত চিন্তাধারা আসবে, আচরণ ও আবেগজনিত প্রকাশে অসামঞ্জস্যতা দেখা দিবে।
খাত সেবনে ইয়াবার মতোই নাকি অনুভব হয় জানিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম শিকদার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: এনপিএস মূলত চিবিয়ে বা জলে ফুটিয়ে চায়ের মতো খাওয়া হয়। এই মাদকের নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। খাতে আসক্তরা মনোবিকলনে ভোগেন। সামাজিক ভাবে নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে করেন।
খাত সেবনে মানবদেহের প্রভাব:
অধ্যাপক ঝুনু শামসুন নাহার বলেন: খাতের পাতা খেলে ভয়ংয়র প্রভাব পড়তে দেরি হবে, যখন সেটা চায়ের মতো খাওয়া হবে তখন মানবদেহে দ্রুতই ক্ষতি সাধন করবে। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকলাপ বিঘ্নিত হবে।বিভ্রান্ত হবে, চিন্তাধারার পরিবর্তন বা বিকৃত চিন্তাধারা আসবে, আচরণ ও আবেগজনিত প্রকাশে অসামঞ্জস্যতা দেখা দিবে।
‘খাতের পাতা যতোটা না ক্ষতিকারক তারচয়ে যখন এটা চায়ের মতো করে খাওয়া হবে তা সেবনকারীর মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়াবে।
সাময়িকভাবে খেয়ে খুব বেশি ক্ষতি হবে না তবে এই মাদকে নিয়মিত খেলে ঘুম নষ্ট হয়ে যাবে, খাওয়া দাওয়ার রুচি কমে যাবে। পরে মানসিক রোগীদের মতো অবস্থা হবে। কারণ ঘুম এবং খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো না করলে মানুষ উন্মাদের মতো আচরণ করবে।
সেবনকারী জটিল মানসিক রোগে ভুগবে। তার চিন্তাধারা (প্রত্যক্ষণ, চিন্তন) এবং অনুভূতি প্রকাশের মধ্যে সঙ্গতি না থাকবে না।’
মাদকের প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা:
বাংলাদেশে খাত নামের নতুন মাদকের গ্রাহক অল্প বিস্তর রয়েছে। তবে যে কোনো নতুন মাদকের বিষয়ে কঠোর হওয়ার কথা জানিয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম শিকদার বলেন, বাংলাদেশেও যেকোনো ধরণের মাদকের প্রবেশ ঠেকাতে আইনের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রথমবারের মতো দেশে খাত আটক হওয়ার পর জানা যায়, চা-পাতার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য হিসেবে সুদৃশ্য ও চকচকে ‘গ্রিন টি’র প্যাকেটে ভরা এসব মাদক যাচ্ছিল ইউরোপ-আমেরিকায়।
ক্যাথিনোন গ্রুপের উদ্ভিদ জাতীয় এই মাদক আফ্রিকায় ‘খাত’ নামে পরিচিত। ইথিওপিয়া থেকে বেশ কয়েকটি দেশ ঘুরে তা বাংলাদেশে আসে।