যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি প্রতিবন্ধী সেবা কেন্দ্রে গোলাগুলির ঘটনার পর পুলিশের অভিযানে নিহত দুই সশস্ত্র সন্দেহভাজনের একজন সৈয়দ রিজওয়ান ফারুক। নিহত অন্য বন্দুকধারীর নাম তাশফিন মালিক। সে ফারুকের স্ত্রী বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সৈয়দ ফারুক যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিলেও তার মা-বাবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে অভিবাসী হয়েছেন। বছরখানেক আগে সৌদি আরব গিয়ে তাশফিনকে বিয়ে করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যায় ফারুক।
প্রতিবন্ধীদের জন্য আন্তর্জাতিক দিবসে ভারী অস্ত্রসজ্জিত বন্দুকধারীরা স্যান বার্নারদিনোতে ওই প্রতিবন্ধী সেবা কেন্দ্রে চলা একটি পার্টিতে হামলা চালালে গুলিতে কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হয়, আহত হয় আরও ১৭ জন।
এরপরই কয়েকশ’ পুলিশ সদস্য হামলাকারীদের ধরতে অভিযানে নামে। একটি স্পোর্টস কারে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের ধাওয়া করে পুলিশ। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায় গাড়ি থেকে পুলিশের দিকে গুলি করা হচ্ছে, পুলিশও পাল্টা গুলি করছে। এক পর্যায়ে নিহত হয় ফারুক ও তাশফিন।
ত্রিশ বছর বয়সী সৈয়দ ফারুকের সামাজিক মাধ্যম প্রোফাইলে পাওয়া তথ্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, সে বিবাহিত এবং অন্তত এক সন্তানের বাবা। স্যান বার্নারদিনোতেই একজন পরিবেশ বিষয়ক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে ফারুক কর্মরত ছিলো বলেও জানা যায়। আর তাশফিন ছিলো একজন ফার্মাসিস্ট।
ফারুকের নাম প্রথম উঠে আসে এক পুলিশ কর্মকর্তার কথাবার্তায়। পুলিশ রেডিওতে শোনা যায়, ওই কর্মকর্তা আরেকজনকে বলছেন, ফারুক নার্ভাস আচরণ করছিলো এবং হামলার ২০ মিনিট আগেই সে পার্টি থেকে চলে যায়।
অন্য কয়েকজনের দেওয়া তথ্যমতে, তাকে পার্টি থেকে চলে যেতে বলা হয়েছিলো।
পরে ক্যালিফোর্নিয়ার রেডল্যান্ডসে ফারুকের পারিবারিক বাসস্থানে অভিযান চালায় পুলিশ। ফারুকের বাবা ঘটনা সম্পর্কে শুনে স্তম্ভিত হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। সে (ফারুক) খুবই ধার্মিক ছিলো। সে কাজে যেতো, বাড়ি ফিরতো, আবার প্রার্থনায় যেতো, বাড়ি ফিরতো। সে একজন মুসলিম।’
সৈয়দ ফারুক ২০০৩ সালে লা সিয়েরা হাই স্কুল থেকে স্নাতক শেষ করে এবং হেলথ টেকনিশিয়ান হিসেবে রেস্টুরেন্ট ও হোটেল পরিদর্শনের দায়িত্বে ছিলো বলে নিশ্চিত করেন ফারুকের বাবা।
তিনি বলেন, ‘ফারুক বিবাহিত এবং তার একটা বাচ্চা আছে। আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমার তালাক হয়ে গেছে। ফারুক পরিবার নিয়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গে থাকে। তাই তাদের সাথে আমার দেখা হয় না।’
ফারুকের বোনের স্বামী ফারহান খান জানান, তার সঙ্গে ফারুকের শেষ কথা হয়েছিলো এক সপ্তাহ আগে। ফারুকের এমন কাজ করার কারণ ভেবে পাচ্ছেন না তিনিও।
প্রতিবন্ধী সেবা কেন্দ্রে হওয়া হামলার নিন্দা জানানো সংস্থা কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসের একাত্মতা প্রকাশ করেছেন ফারহান।
ফারুকের সাবেক সহকর্মী গ্রিসেল্ডা রেইসিংগার জানান, কিছুদিন আগেই পিতৃত্বকালীন ছুটি থেকে ফেরে ফারুক। সে ছিলো খুবই চুপচাপ স্বভাবের লোক।
একই কথা বলেন ফারুকের প্রতিবেশী মারিয়া গুটিয়ারেজ। তিনি বলেন, ফারুক চুপচাপ এবং ভদ্র স্বভাবের ছিলো। ‘সম্ভবত বছর দুই আগে সে বেশি ধার্মিক হয়ে যায়। সে দাড়ি রাখে এবং লম্বা ধর্মীয় পোশাক ও টুপি পরা শুরু করে।’
মারিয়া আরো বলেন, ‘আমি জানি সে অনেক বুদ্ধিমান। কম বয়সে কলেজ শুরু করেছিলো সে। সে আর তার ভাই সারাক্ষণ গ্যারেজে গাড়ি নিয়ে পড়ে থাকতো।’
ফারুকের মা একজন নার্স এবং ভাই সেনাবাহিনীতে আছে বলেও জানান তিনি। এতো বড় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সৈয়দ ফারুকের জড়িত থাকার কথা শুনে বিস্মিত হয়েছেন মারিয়াও।
ক্যালিফোর্নিয়ার ব্যুরো অব অ্যালকোহল, টোব্যাকো অ্যান্ড ফায়ারআর্মস’র মুখপাত্র মেরেডিথ ডেভিস অন্যান্য গুলিবর্ষণের ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে মনে করেন, এই হামলাটিও পূর্ব পরিকল্পিত ছিলো। বন্দুকধারীদের কাছে থাকা ব্যাপক পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ থেকেই বোঝা যায়, সম্ভাব্য বন্দুকযুদ্ধের জন্যও তৈরি ছিলো তারা।
নিহত হওয়ার সময়ও দুইজনের কাছেই ছিলো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র।