ঢাবি প্রতিনিধি: ক্যালকুলেটর ফেরত চাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ঢাবি ছাত্রলীগের নেতারা মেরে রক্তাক্ত করেছেন বলে অভেযোগ পাওয়া গেছে। আহত শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র এহসান রফিক।
মঙ্গলবার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে রাতভর তাকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেলের নির্দেশে মারধর করে তারই কক্ষে বুধবার দিনভর আটকে রাখা হয়। পরে সে বিকালে হল থেকে পালিয়ে আসে।
আহত এহসান জানায়: মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ওমর ফারুক প্রায় তিনমাস আগে তার কাছ থেকে ক্যালকুলেটর ধার নেয়। এহসান ওমর ফারুকের কাছে প্রায়ই ক্যালকুলেটর দাবি করতো। কিন্তু ওমর ফারুক ক্যালকুলেটর পরে দিয়ে দিবে বলে জানাতো।
‘‘সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে ওমর ফারুকের কাছে এহসান ক্যালকুলেটর দাবি করলে ওমর ফারুক তাকে মারধর করে। সে হল শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আরিফের (আইইআর) মাধ্যমে এহসানকে টিভি রুমে ডেকে নেয়। এসময় টিভিরুমে উপস্থিত ছিলেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি তানিম (আইইআর) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিম ইরতিজা শোভন (উর্দু) ও আবু তাহের (পপুলেশন সাইন্স)। তারা এহসানকে শিবির অপবাদ দিয়ে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চেক করে। কিন্তু তারা ফেসবুকে কিছুই না পেয়ে জোরপূর্বক শিবির স্বীকারোক্তি আদায়ে তাকে বেদম মারধর করে। তারা মৌখিকভাবে এহসানকে হল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে হল গেটে বের করে দেয়।
সেখানে আরেকধাপ ছাত্রলীগের হল শাখার সহ সম্পাদক ওমর ফারুক ও রুহুল আমিন, সদস্য সামিউল ইসলাম সামী, আহসান উল্লাহ, উপ সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেলের নেতৃত্বে রড, লাঠি দিয়ে তাকে বেদম প্রহার করা হয়। মারধরের এক পর্যায়ে এহসান জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অবস্থা বেগতিক দেখে আরিফ রাত সাড়ে তিনটায় এহসানকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নিয়ে এসে হল শাখা সভাপতি তাহসান আহমেদের (১৬ নম্বর) কক্ষে তথ্য না প্রকাশের জন্য প্রলোভন ও হুমকি দিয়ে আটকে রাখা হয়। সকালে এহসানের অবস্থা খারাপ হলে তাকে আবার ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে হলে এনে একই কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে হল থেকে পালিয়ে আসে এহসান।’’
পরে আহত এহসানের বাবা রফিকুল ইসলাম এসে তাকে উদ্ধার করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তিনি লিখিত অভিযোগ দেন। এ বিষয়ে আহতের বাবা চিকিৎসকে বরাত দিয়ে বলেন, এহসানের চোখের কর্ণিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। ভবিষ্যতে যেন আর কোন বাবাকে তার সন্তানকে এভাবে নির্যাতিত না দেখতে হয়।
এ বিষয়ে হল শাখা সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল বলেন: ক্যালকুলেটর নিয়ে মারধর করা হয়েছে। যারা মারধর করেছে তাদেরকে হল থেকে বের করে দিয়েছি।
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আলম জোয়ারর্দার বলেন: বিষয়টি জানি না। আমি দেখতেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন: বিষয়টি দেখবো।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগকে এ বিষয়ে অবহিত করা হলে তিনি বলেন: অভিযোগ সত্য হলে দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।