চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ক্যামিলার রাণী হয়ে ওঠা

প্রিন্স চার্লস কখনো রাজা হলে ক্যামিলাকে রাণী হিসেবেই দেখতে চান রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। দীর্ঘ দিন ধরে রাজপরিবারের প্রতি আনুগত্য এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলে ক্যামিলা এটা অর্জন করেছেন বলে মনে করছেন রাজপরিবার বিশ্লেষকরা।

রাণী এলিজাবেথ এর কাছ থেকে পাওয়া এই স্বীকৃতিকে নিজের এবং প্রিয় স্ত্রীর জন্য পরম সৌভাগ্য বলেছেন প্রিন্স চার্লস। ১৭ বছর আগে বিয়ের পর থেকে ক্যামিলা রাজপরিবারে নিজেকে যোগ্য জেষ্ঠ সদস্য হিসেবে প্রমাণ করেছেন।

সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি ক্যামিলার জন্য সহজ ছিলো না। কখনো কখনো তিনি হয়ে ওঠেন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। প্রিন্স চার্লস এবং প্রিন্সেস ডায়ানার বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য সাধারণ মানুষ ক্যামিলাকেই দায়ী করে এসেছে।

১৯৯৪ সালে ক্যামিলার সঙ্গে বিবাহবহির্ভুত সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন প্রিন্স চার্লস। ডানায়ানার সঙ্গে মন থেকে সম্পর্ক চুকে যাবার পরই ক্যামিলার সঙ্গে সম্পর্কে জাড়িয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন চার্লস। ১৯৯৯ সালে ক্যামিলার সঙ্গে চার্লসকে প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে দেখা যায়। সে সময় থেকে জনসাধারনের সমর্থন আদায়ে ক্যামিলারকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। বিভিন্ন দাতব্য কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন ক্যামিলা। তাছাড়া প্রাণী সংরক্ষন সংগঠন, পারিবারিক নির্যাতনবিরোধী প্রচারণাতেও জড়িত থেকেছেন তিনি। নারীদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের বিপক্ষেও সোচ্চার থেকেছেন ক্যামিলা।

গত বছর লন্ডনে এক বক্তৃতায় সারাহ এভারার্ড এবং সাবিনা নেসার হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরুষদেরও উচিত যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।

রাজপরিবারের লেখক পেনি জুনর বলেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে ক্যামিলা রাজ পরিবারের প্রতি অনুগত থেকেছেন। বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করেছেন। দাতব্য কাজে জড়িত থেকেছেন এবং প্রিন্স চার্লসকে সহযোগিতা করে এসেছেন। অপেক্ষাকৃত বেশী বয়সে এসে তাকে এসব কাজের সুযোগ দেয়া হয়েছে। সবক্ষেত্রেই তিনি ব্যতিক্রমী ভুমিকা পালন করেছেন।

১৯৪৭ সালের ১৭ জুলাই এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ক্যামিলা রোজমেরি জন্মগ্রহণ করেন । পূর্ব সাসেক্স এর সাউথ ডাউনে তার বেড়ে ওঠা। ক্যামিলা বই পড়তে পছন্দ করেন খুব বিশেষ করে শিশু সাহিত্য। হে ফেস্টিভ্যাল নিয়ে তার আগ্রহ থাকে খুব বেশী। মহামারীর সময়ে তিনি ইনস্টাগ্রাম ভিত্তিক বইয়ের একটি ক্লাব গঠন করেন। রেডিও শো-এর প্রতিও তার আসক্তি রয়েছে। মহামারীর সময়ে রেডিওতে প্রচারিত ধারাবাহিক নাটকগুলো বন্ধ হয়ে গেলে ক্যামিলা মানসিকভাবে খুব আহত হন।

‘দ্যা ক্রাউন ক্রোনিকলস’ নামে ওয়েবসাইটের সম্পাদক ভিক্টোরিয়া হাওয়ার্ড বলেন, “বছরের পর বছর ধরে ডাচেস অব কর্নওয়ালের ভাল কাজ, তার আনুগত্য এবং কঠোর পরিশ্রমের বিষয়গুলোর সাধারণ মানুষ লক্ষ্য করেছে। আমি মনে করি তার এসব কাজ দেখে মানুষ খুশি হয়েছে।”

বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, ক্যামিলাকে পাশে পেয়ে চার্লস অনেক স্বতিতে আছেন বলে মনে হয়েছে। এ বিয়ের আগে ক্যামিলার জীবন এমন ছিলো না। জনসাধারণের সঙ্গে তার তেমন সম্পৃক্ততাও ছিলো না।

২০২০ সালে ক্যামিলা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, লকডাউনের সময় তিনি অনেক স্বস্তিতে ছিলেন কারণ রাজকীয় সাজপোশাকে জনসম্মুখে আসতে হয়নি তাকে। তবে নাতি-নাতনীদের মিস করেছেন খুব। তাদেরকে জড়িয়ে ধরতে না পারার কষ্টটা বেশী ছিলো।

জুনর মনে করেন, রাণীর ভুমিকায় ক্যামিলা খুব আকর্ষণীয় থাকবেন। তিনি অনেক মজা করতে পারেন। বন্ধুসুলভ আচরণ করেন। তার চোখের ভাষা মানুষকে আকর্ষণ করে। তার সঙ্গে সাক্ষাতে মানুষ ভাল অনুভব করে।

২০০৫ সালে চার্লস এবং ক্যামিলার বিয়ের পর জনমতের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ঘোষণা করা হয়, রানী নয়, ক্যামিলার উপাধী হবে প্রিন্সেস। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্যামিলাকে ভবিষ্যৎ রাণী হিসেবে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষ মেনে নিবে।

সাবেক রাজকী প্রতিনিধি পিটার হান্ট বলেছেন, “ক্যামিলার জন্য একজন তৃতীয় ব্যক্তি থেকে ভবিষ্যৎ রাণী হওয়ার পথটি সুসম্পন্ন হয়েছে।

হ্যালো ম্যাগাজিন এর এমিলি ন্যাশ স্বীকার করেছেন, “রাণী ক্যামিলার স্বীকৃতির মাধ্যমে বহু বছর ধরে চলমান একটি বিতর্কের অবসান হলো।

ইতিহাসবিদ রবার্ট ল্যাসি বলেছেন, ক্যামিলাকে কোন সময়ে এসে ভবিষ্যৎ রাণীর স্বীকৃতি দেয়া হলো সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাণী এ স্বীকৃতি দিলেন প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুর এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে। বিষয়টি খুবই মর্মস্পর্ষী। জীবনে সঙ্গীর প্রয়োজন কতটা তা অনুভব করে রাণী এ স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি অল্প কিছুদিন হলো নিজের সঙ্গীকে হারিয়েছেন।  সম্প্রতি ঘোষিত স্বীকৃতির পেছনে এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।