কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপনের দাবিতে আন্দোলনরত নেতাদের গ্রেপ্তার, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-মামলা, ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রীরা। এ বিক্ষোভে রোকেয়া হল, কবি সুফিয়া কামাল হল ও শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীরা অংশ নেন।
অন্যদিকে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মানববন্ধন করেছে আরেকটি পক্ষ।
হলের ছাত্রীরা সাড়ে ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে যান, তবে সেখানে আরেকটি পক্ষ থাকায় তারা শামসুন্নাহার হলের সামনে গিয়ে প্রায় ২০ মিনিট মিছিল করেন। শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীরা বের হতে চাইলে কর্তৃপক্ষ তাদের বাধা দেয় বলে জানান অন্য দুই হলের ছাত্রীরা। এরপর ছাত্রীদের মিছিলটি কলাভবন এলাকা হয়ে ছাত্র হলগুলোর সামনে ঘুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আসে।
লাইব্রেরির সামনে তার আগেই দাঁড়িয়ে থাকেন ছাত্রলীগের প্রায় ৫০-৬০ জন নেতাকর্মী।
সেখানে ছাত্রীরা সমাবেশ করতে চেয়ে ‘আমার ভাইয়ের ওপর হামলা কেনো, বিচার চাই বিচার চাই’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
তখন উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও ‘পড়ালেখা করবো, পরীক্ষা দেবো’, ‘অবৈধ আন্দোলন, মানি না মানবো না’ বলে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন।
তখন ছাত্রীরা লাইব্রেরির সামনে থেকে সরে টিএসসি এলাকায় চলে আসেন। সেখান থেকে রোকেয়া হলের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
তবে শেখ মৌসুমী আহমেদ নামে আন্দোলনকারী এক ছাত্রী দাবি করেন, ছাত্রলীগ নেতারা তাদের কটুক্তি করেছে বলেই তারা লাইব্রেরির সামনে থেকে সরে যান।
তিনি বলেন, তারা আমাদের সেখানে হয়রানির চেষ্টা করেছে এবং কটূক্তি করেছে। তাই আমরা সেখান থেকে চলে এসেছি।
লাইব্রেরির সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের স্কুল বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন। তাকে শনিবার কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে, রোববার শাহবাগে ও সোমবার শহীদ মিনারে আন্দোলনকারীদের মারধোরে অংশ নিতে দেখা যায়। তবে তিনিও চাচ্ছেন হামলাকারীদের বিচার হোক।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই কোটা বিষয়ে একটা কমিটি করেছেন, ১৫ দিনের মধ্যে তারা রিপোর্ট দিবেন কিন্তু তা না দেখেও কেন ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে?
হামলায় তাকে অংশ নিতে দেখা গেছে, সাংবাদিকদের এমন কথার উত্তরে তিনি বলেন, হামলা কারা করেছে আমরা জানি না, সেটা আইন দেখবে, বিশ্ববিদ্যালয় দেখবে। কিন্তু এই ইস্যু নিয়ে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল যদি করা হয়, আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমরা মেনে নেবো না।
হামলার বিচার চান কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, অবশ্যই। বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করা হবে কেন?
রোকেয়া হলের সামনে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রী শেখ মৌসুমী আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, যৌক্তিক আন্দোলনে অংশ নিয়ে রাশেদ রিমান্ডে, নূর হাসপাতালে, ফারুক কারাগারে। এ অবস্থায় আমরা ক্লাসে অংশ নিতে পারি না। তাদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরব না।
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা সাফা বলেন, আজকে আমরা যখন বিক্ষোভ করে গ্রন্থাগারের সামনে আসি সেখানে অনেক ছেলে আমাদের কটূক্তি করেছে। আমরা ক্যাম্পাসে নিরাপদ থাকতে চাই। কোনো ধরনের হামলা চাই না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরকে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল করার ‘চক্রান্ত’ ঠেকাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আয়োজনে মানববন্ধন করেছেন আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা।
সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়। এতে অংশ নেন হোম ইকোনমিক্স, ইডেন ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের ছাত্রীরাও। এ সময় তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের কিছু কেন্দ্রীয় নেতাকেও দেখা যায়।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা প্রথমে নিজেদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী বলে পরিচয় দেন। কিন্তু হলের কক্ষ নম্বর জানতে চাইলে পরে স্বীকার করেন তারা হোম ইকোনোমিক্স কলেজের ছাত্রী।