কুমিল্লায় চাচা ও দাদীর দ্বারা অপহরণের শিকার তাফসিরুল ইসলাম (৫) নামে এক শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। অপহরণের প্রায় ৭ ঘণ্টা পর জেলার মুরাদনগর উপজেলার শুশুন্ডা কবরস্থান মসজিদ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে শিশুটির চাচা-দাদীসহ ৪ জনকে।
অপহৃত শিশু তাফসির উপজেলার নহল গ্রামের প্রবাসী আক্তার হোসেনের ছেলে।
গ্রেপ্তাররা হলেন: গ্রামের মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে ও অপহৃত তাফসিরের বাবার চাচাতো ভাই কবির হোসেন (৩৩), দাদি জোহরা বেগম (৬০), রায়তলা গ্রামের শাহ আলমের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (২৬) ও নাগেরকান্দি গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে রাসেল মিয়া (২২)।
পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটি অপহরণের পর প্রথমে কবির ও পরে জোহরা বেগমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের কাছ থেকে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে বাকিদের অবস্থানও নিশ্চিত হয় পুলিশ। এসময় মোবাইল ফোনে তাদের দাবিকৃত মুক্তিপণের ৪ লাখ টাকা দেয়ার কথা বললে সে টাকা নিতে এসে গ্রেপ্তার হয় অপহরণে জড়িত অন্যরা।
শিশু তাফসিরুল ইসলামের অপহরণ, উদ্ধার ও ৪ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে বুধবার দুপুরে কুমিল্লা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এসময় পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, অপহৃত শিশুটির মা তানিয়া আক্তার (২৭) মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে টাকা উত্তোলনের জন্য উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ সোনালী ব্যাংকে যাওয়ার পথে ছেলে তাফসিরকে চাচাতো দেবর কবির হোসেনের মোটর সাইকেলে বসে থাকতে দেখেন।
ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে বাড়ি ফেরার পথে কবিরের স্ত্রী তাকে ফোন করে জানায় তাফসিরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর ৫ মিনিট পর অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে ফোন করে তাফসিরকে অপহরণের কথা জানানো হয় এবং মুক্তিপণ হিসেবে ৪ টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। টাকা না দিলে শিশুটিকে খুন করে ফেলা হবে। পরে তানিয়া বেগম তার ছেলে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির বিষটি নিকট আত্মীয় আশ্রাফ মেম্বারের মাধ্যমে বেলা ৩টায় মুরাদনগর থানা পুলিশকে জানায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম, মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মনজুর আলমের দিকনির্দেশনায় থানার তদন্ত কর্মকর্তা নাহিদ আহম্মেদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে অপহৃত শিশু তাসফিরের চাচা কবিরকে আটক করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সে অপহরণের বিষটি স্বীকার করে জানায়, জোহরা বেগমের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় দেলোয়ার হোসেন, রাসেল মিয়া, নাসির, বাহাদুর, রুবেল মিলে তাফসিরকে মুক্তিপণ পাওয়ার লোভে অপহরণ করা হয়।
পরে জোহরা বেগমকে গ্রেপ্তার করে অন্য আসামীদের অবস্থান শনাক্ত করে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বললে অপহরণকারী রাসেল উপজেলার নাগেরকান্দি এলাকা থেকে মুক্তপণের টাকা নিতে আসে। এসময় পুলিশ কৌশলে রাসেলকে গ্রেপ্তার করে রাসেলের মাধ্যমে অপহরণকারী দেলোয়ারকে জানায় মুক্তিপণের টাকা পাওয়া গেছে। তখন দেলোয়ার তানিয়া বেগমকে মুঠোফোনে বলে, ‘তোমার ছেলে শুশুন্ডা কবরস্থান মসজিদে আছে, নিয়ে যাও।’
পরে পুলিশ সন্ধ্যা ৭টার দিকে সেখান থেকে তাফসিরকে উদ্ধার করে। অপহরণে জড়িতে বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম, মুরাদনগর থানার ওসি মনজুর আলম, পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তা মাহাবুব মোর্শেদসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে শিশু তাফসিরকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন তার মা তানিয়া আক্তারও।