মঙ্গোলিয়া, বাহারাইন ও সেশেলসের মতো দেশগুলিতে চীনা ভ্যাকসিন প্রত্যাশার চেয়ে কম কার্যকর হয়েছে, সংক্রমণের তীব্রতায় এখনো লড়াই করতে হচ্ছে দেশগুলোর।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের (ডেলটা, ডেলটা প্লাস) বিরুদ্ধে খুব একটা কার্যকরী হতে পারেনি চীনা ভ্যাকসিন সিনোভ্যাক কিংবা সিনোফার্ম।
আওয়ার ওয়াল্ড ইন ডেটার ‘ডেটা-ট্র্যাকিং প্রকল্প’ বলছে, সেশেলস, চিলি, বাহরাইন এবং মঙ্গোলিয়ায় জনসংখ্যার প্রায় ৫০ থেকে ৬৮ শতাংশ চীনা ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। গত ১০ সপ্তাহের মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে খারাপ থাকা শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে এই দেশগুলো রয়েছে।
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিপক্ষে ইন্দোনেশিয়ার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছিলেন, কিন্তু ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরও ৩৫০ জনের বেশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা পজিটিভ এসেছে।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন অনুমোদন দেওয়ার পরও দেশগুলোতে ব্যাপক করোনা পজিটিভের রিপোর্ট এসেছে।
সেশেলসের পর ইসরায়েল এখন পর্যন্ত বিশ্বে দ্বিতীয় দেশ যেখানে সর্বোচ্চ ভ্যাকসিন প্রয়োগ হয়েছে। ইসরায়েলে ফাইজারের ভ্যাকসিন নেওয়ার পর প্রতি দশ লাখে চার দশমিক ৯৯ শতাংশ মানুষ করোনা পজেটিভ হয়েছে। অন্যদিকে আফ্রিকার দেশ সেশেলসে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও প্রতি লাখে ৭১৬ জনের বেশি করোনা সংক্রমিত হচ্ছে।
মঙ্গোলিয়ায় ৫২ শতাংশ জনগণকে চীনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার পর গত রোববার দেশটিতে নতুন করে দুই হাজার ৪০০ জন করোনা আক্রান্ত হন। যা কিনা একমাসে আগের চেয়ে চারগুণ বেড়েছে।
জানা যায়, ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মর্ডানার ভ্যাকসিনগুলির কার্যকারিতা হার ৯০ শতাংশের বেশি। সেখানে চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা হার ৭৮ দশমিক ১ শতাংশ এবং সিনোভাক ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা হার ৫১ শতাংশ।
যা বলছে বিশেষজ্ঞরা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব দেশে বেশি চীনা ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে, সেখানে খুব একটা প্রভাব পড়েনি।
অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটির কলেজ অফ মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথের অধ্যাপক নিকোলাই পেট্রোভস্কি বলেন, চীনা ভ্যাকসিনের ঝুঁকি হলো ভ্যাকসিন দেওয়ার পরও কিছু মানুষের মধ্যে সংক্রমণ থেকে যায় এবং পরে তা অন্যদের সংক্রমিত করে।
ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে যা বলছে চীন
এদিকে নিউ টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এক বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে তারা সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব এবং এর ভ্যাকসিনগুলির মধ্যে কোনও যোগসূত্র দেখেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে উদ্ধৃত করে চীন বলছে, নির্দিষ্ট কিছু দেশে টিকা দেওয়ার হার প্রাদুর্ভাব রোধে পর্যাপ্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে না এবং দেশগুলিতে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা দরকার।
পাশাপাশি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, চীনের তৈরি ভ্যাকসিন ব্যবহার করে এমন অনেক দেশ বলছে যে, তারা নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য, এবং তাদের মহামারী প্রতিরোধ প্রচেষ্টাতে ভাল ভূমিকা পালন করেছে।