‘হামরা জানোছুনো কাইছার ঢাকাত ইস্কা চলায়। খারাপ কাজ করে তাতো জানোছোনো না। তাইতো কেউ কোটে অকাম জরলে খালি ওর গাওত দোষ দ্যাওছলো। আর আত-বিরাতে পুলিশ আওছলো ওক ধরবা। তকন হামাগোরকও ভয় লাগোছলো। একন শোনোছি কাইছার গুলি খায়ে মছে। আজতে আর পুলিশক আসা লাগবেনা ওক ধরবা।’
কাঁদতে কাঁদতে আঞ্চলিক ভাষায় বিলাপ করে এ কথাগুলো বলছিলেন মানিকগঞ্জের সিংগাইরে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত কায়ছার আলী মণ্ডলের খালা হাসনা বেগম (৭০)। বৃহস্পতিবার ভাগিনা কাইছারের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ওই বাড়িতে এসেছিলেন।
বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চারিগ্রাম ইউনিয়নের আলমমারা এলাকায় র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্ধুকযুদ্ধে কায়ছার আলী মারা যান। তিনি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার জয়হার গ্রামের বাসিন্দা। আট ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি।
কায়ছারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির উঠানে বসে দুজন নারী কাঁদছিলেন। কিছুক্ষণ পর প্রতিবেশীরা লাশ কখন আসবে, তা জানতে আসেন ওই নারীদের কাছে। আস্তে আস্তে সেখানে উৎসুক জনতা ভীড় জমাতে থাকে। পাশেই ভেঙে পরা একটি ঘর। জানা গেলো কায়ছার এ ঘরে বসবাস করতেন, কিন্তু ঘরটি বৃষ্টির পানিতে ভেঙে যাওয়ায় প্রথম স্ত্রী শ্বশুরবাড়িতে চলে যান। আর দ্বিতীয় স্ত্রী ঢাকায় বসবাস করছেন।
গ্রামবাসী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত কায়ছার আলী এলাকায় দুধর্ষ প্রকৃতির ছিলেন। কোথাও চুরি বা ডাকাতি হলে পুলিশ তাকে সন্দেহ করত। প্রায়ই তার খোঁজে পুলিশ বাড়িতে আসত। কায়ছারের বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। সাত মাস আগে মারা যান কায়ছারের মা আমিনা বেগম। মায়ের মিলাদ করার পর বাড়িতে পুলিশ আসতে পারে বলে তিনি নিরুদ্দেশ হন। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুসুম্বা ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে কায়ছার আলী মারা যাওয়ার ঘটনাটি জানতে পারেন স্বজনরা।
কায়ছারের বড় ভাই বেলাল হোসেন বলেন, কায়ছার গ্রামে থাকতে মাছের ব্যবসা ও জমি আবাদ করত। সে বাইরে খারাপ কাজ করত, সেটি আমরা কেউ জানতাম না। তবে কায়ছারের খোঁজে বিভিন্ন থানার পুলিশ বাড়িতে আসত। তখন সে পালিয়ে থাকত।সাত মাস আগে বাড়ি ছেড়েছে। আমরা মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। আজ শুনলাম ও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে।
কায়ছারের ভাবি জোবেদা বলেন, কায়ছার দুটি বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রী বাপের বাড়িতে থাকে। সেই পক্ষের একটি ছেলে আছে। তার বাড়িতে কেউ থাকে না। সে ঢাকায় রিকশা চালায় বলে শুনেছিলাম। উনি যে ডাকাতি করত সেটি আমরা জানতাম না।
কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিহাদ মণ্ডল বলেন, কায়ছারকে সাত মাস আগে তার মায়ের মিলাদের সময় গ্রামের লোকজন দেখেছিল। এরপর তাকে আর কেউ কখনো দেখেনি। র্যাবের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে নিহতের খবর পেয়ে বিষয়টি তার স্বজনদের জানাই।
পাঁচবিবি থানার অফিসার ইনচার্জ পলাশ চন্দ্র দেব বলেন, কায়ছার আলী মণ্ডল মানিকগঞ্জে সিংগাইরে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, মাদক ও ছিনতাই সহ পাঁচবিবি থানাতেই তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা চলমান রয়েছে। এ ছাড়া দেশে অন্যান্য থানায় আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে।