পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানের সঙ্গে করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবারও ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
এই ঘোষণাকে ‘অবৈধ’ বলে আখ্যায়িত করেছে তেহরান।
পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে করা চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে দাঁড়ানোর খবরটি শোনা যাচ্ছিল বেশ কদিন ধরেই। শেষ পর্যন্ত সেই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণাই দিলো যুক্তরাষ্ট্র।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে করা এ চুক্তিকে ‘ক্ষয়িঞ্চু’, ‘পচনশীল’ এমনকি ‘উদ্ভট’ বলে আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, একজন মার্কিন নাগরিক হিসেবে তার কাছে ইরানের সঙ্গে করা এ পরমাণু চুক্তি লজ্জাকর।
সেই সাথে ২০১৫ সালে চুক্তি হওয়ার পর ইরানের ওপর থেকে যেসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল সেগুলো আবারও আরোপ করার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণাকে অবৈধ অভিহিত করে এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইরান জানিয়েছে, এভাবে চুক্তি থেকে সরে যাওয়া আন্তর্জাতিক রীতিনীতির প্রতি অবমাননাকর ও অগ্রহণযোগ্য। আবারও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিসহ পরমাণু কর্মসূচির জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছেন বলে সতর্ক করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।
ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেও বিষয়টি ভেবে দেখতে বলে রুহানি যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসলে ‘ঐতিহাসিক অনুতাপের’ সম্মুখিন হতে হবে।
ট্রাম্পের এ একতরফা সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। হতাশা প্রকাশ করেছে রাশিয়া। ইরানকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে তারা এই চুক্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।
তবে এই সিদ্ধান্তের জন্য ট্রাম্পকে সাধুবাদ জানিয়েছে সৌদি আরব ও ইসরাইল।
ক্ষমতায় গেলে বারাক ওবামার করা এ চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা নির্বাচনী প্রচারণার সময়ই দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে অনেক মার্কিন সামরিক উপদেষ্টাও এ চুক্তি বহাল রাখার পক্ষে ছিলেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে এই চুক্তিতে অবিচল থাকতে ট্রাম্পকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ। শেষ মুহূর্তে ট্রাম্পকে বোঝাতে ওয়াশিংটনে ছুটে যান যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন।
তারপরেও মিত্রদের উপেক্ষা করেই একতরফা সিদ্ধান্ত নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
২০১৫ সালে ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দেশটির সঙ্গে চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি। চুক্তি অনুযায়ী পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করার বিনিময়ে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পায় ইরান।
তবে তারা চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে আরমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে বলে বারবার অভিযোগ করতে থাকে ইসরায়েল। শেষ পর্যন্ত নানা আলোচনা-সমালোচনার এই চুক্তি থেকে বের হয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।