‘ভালো ভালো সিনেমায় কাজ করতে চাই। মেথড অভিনয় করতে চাই। অভিনয় বা আমার কাজের মাধ্যমে মানুষকে শিক্ষণীয় কিছু দিতে চাই। এজন্য ভালো পরিচালক, প্রোডাকশন হাউজ, ডিওপি, চিত্রনাট্য ও টিমের সংস্পর্শ চাই। কাজ দিয়েই বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে চাই। ভালো সিনেমা করার জন্য কয়েকটি মিউজিক ভিডিও, একটি সিনেমা এবং একাধিক নাটকের প্রস্তাব পেলেও আমি করিনি।’
চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে এসব প্রত্যয়ী কথাগুলোই বলছিলেন সাজ্জাদ হোসেন। চ্যানেল আইয়ের আলোচিত রিয়েলিটি শো ‘মেনস ফেয়ার এন্ড লাভলি চ্যানেল আই হিরো-কে হবে মাসুদ রানা?’র প্রথম রানারআপ ছিলেন তিনি।
ওই প্লাটফর্ম থেকে বেরিয়ে সাজ্জাদ কাজ করতে যাচ্ছেন হলিউড ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার যৌথ প্রযোজনায় ‘এমআর নাইন- মাসুদ রানা’ ছবিতে। তার চরিত্রটি সিক্রেট এজেন্টের।
কাজী আনোয়ার হোসেনের আইকনিক গোয়েন্দা চরিত্র ‘মাসুদ রানা’ আসিফ আকবরের পরিচালনায় নাম ভূমিকায় থাকছেন এবিএম সুমন। তার বিপরীতে আছেন আরেক নবাগতা সৈয়দা তৌহিদা হক অমনি। এই সিরিজের জন্য সেবা প্রকাশনী ও কাজী আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ‘ধ্বংস পাহাড়’সহ ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের তিনটি উপন্যাসের কপিরাইট নিয়েছে জাজ। মার্চেই এ ছবির শুটিং হতো।
কিন্তু করোনায় সবকিছু থেমে যাওয়ায় ছবির শুটিংও আটকে গেছে। সাজ্জাদ আশা করছেন, নভেম্বরের দিকে শুরু হতে পারে তার ‘এমআর নাইন- মাসুদ রানা’ ছবির শুটিং। তাদের টিমও চাইছে, চলতি বছরের মধ্যে শুটিং করে কাজ আগাতে। সাজ্জাদ বলেন, এ ছবির বেশিরভাগ শুটিং হবে সাউথ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রে। করোনার জন্য ভিসা ও শুটিং করা কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তাই বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে প্ল্যানিং চলছে।
আর এ ছবির জন্য প্রস্তুত হতে সাজ্জাদকে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে। শিখছেন ফাইটিং। ওজন কমিয়ে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন। তিনি বললেন, জাজে অডিশন দেয়ার এক সপ্তাহ পরেই আমাকে গ্রিন সিগনাল দেয়। আমার চরিত্রের নাম সোহেল। সেকেন্ড লিড চরিত্র। তিনটি সিরিজ হবে। তিনটিতেই আমি নির্বাচিত। খসরু পারভেজ রুমি ভাইয়ের কাছে ২ মাসে ফাইটিংয়ের বিভিন্ন ধাপের ট্রেনিং নিচ্ছি।
‘যখন শুটিং হবে, আমার ফাইট ডিরেক্টর থাকছেন ফিলিপ টান। উনি টাইগার শ্রফের সিনেমাগুলোতে কাজ করেছেন। এছাড়া ফার্স্ট এন্ড ফিউরিয়াসে স্টানম্যান ছিলেন। শুটিং শুরুর আগে তার সঙ্গে একটা চূড়ান্ত ট্রেনিং হবে। বন্দুকের ব্যবহার, আত্মরক্ষাসহ অ্যাকশনের জন্য সবকিছু শিখছি। ব্যক্তিগত ট্রেইনারের মাধ্যমে দিনে দুবার করে ওয়ার্কআউট করছি।’
লন্ডনে লেখাপড়া কালীন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী (ইউ কে)-তে আড়াই বছর ধরে থিয়েটার কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। তখনই অভিনয় রপ্ত করেন সাজ্জাদ। ‘কে হবে মাসুদ রানা?’র প্রতিযোগিতায় তার অভিনয়ে মুগ্ধ হতেন সবাই। তিনি বললেন, অভিনয় হলো ন্যাচারাল বিষয়। এক্টিংয়ের একটা রিয়েক্ট রয়েছে। দেয়ালে ঘুষি মারা হলো এক্টিং। তারপর দেয়াল থেকে হাতে যে প্রতিক্রিয়া আসে সেটা হলে রিয়েক্টিং। অভিনয় বাস্তব জীবন থেকে শিখেছি। জীবনে যে সব পরিস্থিতি আসে সেসব ক্ষেত্রে নিজেকে বসালেই অভিনয় হয়ে যায়। থিয়েটার শুধুমাত্র জড়তা কাটিয়ে দেয়।
দেশে ফিরে মডেলিংয়ে টুকটাক কাজ করতে থাকেন। কিন্তু সাজ্জাদের মন পড়ে থাকতো অভিনয়ে। ‘চ্যানেল আই কে হবে মাসুদ রানা?’র মাধ্যমে সাজ্জাদের জীবন বদলে যায়। তিনি খেয়াল করেন, তার সবকিছু আগের মতো নেই। সাজ্জাদের ভাষায়, মিডিয়া এবং স্টারডম জিনিষগুলো একেবারেই জানতাম না। আগে দেখতাম সেলেব্রেটিদের নিয়ে পত্রপত্রিকায় নিউজ হতো, তাদের বাইরে দেখলে মানুষ জড়ো হয়ে অটোগ্রাফ-সেলফি নিতো। চ্যানেল আই মাসুদ রানার মঞ্চ আমাকে অন্য একটা স্থানে পৌঁছে দিয়েছে। মানুষ এখন আমাকে বাইরে দেখলে কথা বলে, আগ্রহ নিয়ে জানতে চায়, চ্যানেল আই মাসুদ রানার মঞ্চের সেই সাজ্জাদ আসলে কেমন! এই জিনসগুলো আমার খুব ভালো লাগে। আমিও এনজয় করি।
‘চ্যানেল আই কে হবে মাসুদ রানা?’র ট্রেনিংয়ে ছিলেন সেখান থেকে নতুন করে অনেককিছু শিখে পরিণত হয়েছেন সাজ্জাদ। তিনি বলেন, ভালো ভালো নির্মাতা, প্রাচ্যনাটের শিক্ষক, রুসলানের মতো জিম সেন্টারসহ অনেক মাধ্যম দিয়ে নতুন নতুন বিভিন্ন বিষয় শিখেছি। এককথায়, চট্টগ্রামের এক সাধারণ সাজ্জাদকে দেশের মানুষের কাছে চিনিয়েছে চ্যানেল আই। এজন্য আমি কোনোদিনই ঋণ শোধ করতে পারবো না।