বিশ্বব্যাপি মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে প্রায় ৪৮ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। ২৩ কোটি ৪৫ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। গত প্রায় দুই বছর বিশ্বব্যাপী চরম অচলাবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে বৈশ্বিক মন্দার মত পরিস্থিতি। এই সময় করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী অবদান। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ ভ্যাকসিন নিয়ে এখন এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। যদিও সারা বিশ্বে আশানুুরূপ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যায়নি। তবু সারা বিশ্বে ভ্যাকসিনেসনের সময় প্রকাশিত হলো আরেকটি আশা জাগানিয়া সংবাদ। ট্যাবলেট আকারেই করোনা প্রতিরোধের ওষুধ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
চ্যানেল আই অনলাইনের এক সংবাদে জানা যায়: করোনারভাইরাস প্রতিরোধে মুখে খাওয়ার ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় অর্ধেক কমিয়েছে। মলনুপিরাভির নামে এই ট্যাবলেটের মধ্যবর্তী ক্লিনিকাল ট্রায়ালে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এ ওষুধটি করোনায় আক্রান্তদের দিনে দুইবার খেতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মারসিকে বলেছে, ওষুধটির গবেষণার ফলাফল এতটাই ইতিবাচক যে বাইরের পর্যবেক্ষকদের ট্রায়াল বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে এই ওষুধের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনের আবেদন করবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রধান চিকিৎসা পরামর্শক ড. অ্যান্থনি ফাউসি বলেন: এই ফলাফল ‘খুবই ভালো খবর’। কিন্তু যতক্ষণ না যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন তথ্য পর্যবেক্ষণ করছে ততক্ষণ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসার জন্য এই ওষুধটি তৈরি করা হয়েছিল। আর এমনভাবে তা তৈরি হয়, যেন ভাইরাসটির জেনেটিক কোডে ত্রুটি তৈরি করে, তাহলে সেটা শরীরে ছড়িয়ে পড়া থেকে রক্ষা পাবে। ৭৭৫ জন রোগীর উপর চালানো গবেষণার বিশ্লেষণ বলছে, যাদের মলনুপিরাভির দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ৭.৩ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। বিপরীতে যারা মন ভালো রাখার জন্য ওষুধ নিয়েছিলো (প্লেসবো) বা ডামি পিল নিয়েছে তাদের ১৪.১ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মলনুপিরাভির নেয়াদের কারোরই মৃত্যু হয়নি, তবে প্লেসবো দলের ৮ জন রোগী প্রাণ হারায়। চলতি বছরেই এক কোটি মলনুপিরাভির উৎপাদনের আশা করছে মার্ক। এফডিএর অনুমোদন পেলে মার্কের কাছ থেকে ১২০ কোটি ডলারের মলনুপিরাভির কেনার জন্য রাজি হয়েছে মার্কিন সরকার। এদিকে শুধু মার্কই না, করোনা চিকিৎসায় খাওয়ার অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নিয়ে কাজ করছে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিযোগিতায় মার্কের পরই এগিয়ে রয়েছে ফাইজার ও সুইস কোম্পানি রোচ।
ভ্যাকসিন বা টিকার নেয়ার ক্ষেত্রে নানাবিধ জটিলতা কাজ করে দেশে দেশে। ভ্যাকসিন সংরক্ষণ পদ্ধতিটিও অনেক ঝামেলার। সেক্ষেত্রে খাবার ট্যাবলেট হিসেবে নতুন ওষুধটি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে মানুষের আগ্রহ বাড়বে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমতি নিয়ে এখন এই ওষুধটি সারা বিশ্বে বাজারজাতকরণ জরুরি। আমরা আশা করবো সাধারণ মানুষে সাধ্যের ভেতর এই ওষুধটি সহজলভ্য হবে এবং মানুষ অচিরেই করোনার এই মহামারী থেকে মুক্ত হবে।