করোনাভাইরাসের কারণে কৃষি ঋণ বিতরণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। চলতি বছরের মার্চে কৃষিখাতে ৩ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো, যা আগের বছরের মার্চের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। ওই সময় ঋণ বিতরণ হয়েছিল ৬ হাজার ২২২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে লকডাউন ঘোষণার পর ব্যাংকের বেশিরভাগ শাখাই বন্ধ হয়ে যায়। কিছু খোলা থাকলেও শুধু লেনদেন চলেছে সীমিত আকারে। এছাড়া ব্যাংক খোলা ছিল শুধু শহরাঞ্চলে। উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রায় সব শাখা বন্ধ ছিল। ফলে নতুন ফসল আবাদে ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেননি কৃষক। ব্যাংকগুলোও তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে কৃষিঋণ বিতরণ কমেছে।
করোনার সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি থাকলেও কৃষিখাত ছিল সচল। তাই সরকার কৃষিতে উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ খাতে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ বাড়াতে আগামী ১ বছর সুদ ভর্তুকি দেবে সরকার। কৃষকরা ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন। আর ৫ শতাংশ সুদ ভর্তুকি হিসেবে ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করবে সরকার। কৃষিঋণের অন্তত ৬০ শতাংশ শস্য খাতে বিতরণ করতে হবে। কিন্তু সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কৃষি ঋণ বিতরণে এগিয়ে আসেনি ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চে কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৩ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের মার্চের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। ওই সময় ঋণ বিতরণ হয়েছিল ৬ হাজার ২২২ কোটি টাকা। এর পরের মাস এপ্রিলে কৃষিঋণ বিতরণে ধস নেমে আসে। এপ্রিলে ঋণ বিতরণ হয়েছে মাত্র ৪৯৬ কোটি টাকা। অথচ আগের বছর একই সময় ঋণ বিতরণ হয়েছিল ২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণ বিতরণ প্রায় ৭৯ শতাংশ কমে গেছে।
তবে মে মাসে ঋণ বিতরণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৩২ কোটি টাকায়। যা তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৭ শতাংশ কম। আগের বছরের মে মাসে ১ হাজার ৮১০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছিল ব্যাংকগুলো। সব মিলে লকডাউনের ৩ মাসে কৃষিখাতে ব্যাংকগুলো ৫ হাজার ৮৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ে চেয়ে ৫০ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম। আগের বছরের এই ৩ মাসে ঋণ বিতরণ হয়েছিল ১০ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষিখাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। কিন্তু ১১ মাসে (জুলাই-মে) পর্যন্ত বিতরণ করেছে ১৮ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এক মাসে ৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করতে হবে।
এছাড়া আগের বছরের আলোচ্য ১১ মাসে ব্যাংকগুলো কৃষিখাতে ঋণ দিয়েছিল ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এ হিসেবে ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ।
লকডাউনের কারণে ঋণ বিতরণ কমার পাশাপাশি ঋণ আদায়ও অনেক কমেছে। এপ্রিলে আদায় হয়েছে মাত্র ৭৬৭ কোটি টাকা। আগের বছরে এ মাসে আদায় হয় ১ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। মে মাসে আদায় আরও কমে মাত্র ৫৬১ কোটি টাকায় নেমে আসে। আগের বছরের মে মাসে আদায় হয় ১ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। ১১ মাসে আদায় ২০ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা থেকে কমে ১৮ হাজার ২৭১ কোটি টাকা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে আদায় কার্যক্রম কমেছে সাড়ে ১১ শতাংশ। তবে এপ্রিল ও মে মাসে আদায় অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে।