করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা প্রণোদনা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, ইউনাইটেড আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, ওমান প্রবাসী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ প্রণোদনার জন্য আবেদন করেছে বলে জানিয়েছে সৌদি আরবে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস।
সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ জানিয়েছেন বর্তমান করোনাভাইরাসের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে সৌদি আরবের রিয়াদ, জেদ্দা, দাম্মাম, মক্কা, মদিনা, এবং তাবুকে প্রবাসী সন্তানদেরকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজারের অধিক প্রবাসী ছাত্র ছাত্রী লেখাপড়া করে আসছে।
উল্লেখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এতদিন অভিভাবকদের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হয়ে আসছিল কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং করোনাভাইরাসে আগামী ছয় মাস এর প্রভাব থাকবে ফলে একদিকে যেমন প্রবাসীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে অন্যদিকে বন্ধ হয়ে যাবে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
স্কুলগুলোর পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রণোদনার জন্য আবেদন পাওয়ার পর পরই বাংলাদেশ সরকারকে সৌদি আরবের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের কাছে এসব বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। রাষ্ট্রদূত আরো বলেন প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ দূতাবাস রিয়াদ সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
কথা হয় জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ বাংলা জাতীয় কারিকুলাম এর অধীনে পরিচালিত স্কুল গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি খন্দকার এ কে আজাদ এর সাথে তিনি জানান জেদ্দার ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলটি ১৯৭৯ সালে সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এর হাতে উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রবাসে বাংলাদেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি কৃষ্টি কালচার প্রসারে প্রশংসনীয় ভাবে কাজ করে আসছে।
এতদিন অভিভাবকদের টিউশন ফি দিয়ে প্রতিষ্ঠান এতদিন সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসলেও বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আগামী ছয় মাস এর প্রভাব থাকে তাহলে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে স্কুলটি। এতে করে একদিকে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। বেকার হয়ে যাবে শিক্ষক শিক্ষিকা ও প্রতিষ্ঠান গুলোর আরো কয়েক শ কর্মকর্তা কর্মচারী।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন ,প্রতিষ্ঠানটি ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে তিন লাখ রিয়াল এর বেশি খরচ হয় গত মার্চ মাস থেকে স্কুল বন্ধ হবার পর অভিভাবকরা কোন প্রকার টিউশন ফি প্রদান করছেন না এমনকি বর্তমান পরিস্থিতিতে অভিভাবকের নিকট কোন ধরনের ফি প্রদান করার জন্য নোটিশ জারি করা যাচ্ছে না কারণ ভাইরাসের কারণে বর্তমানে সবকিছু বন্ধ বেশিরভাগ প্রবাসীরা বেকার হয়ে ঘরে অবস্থান করছেন অনেক প্রবাসী অভিভাবক ইতিমধ্যে জানিয়েছেন তাদের পক্ষে কোন ধরনের ফি প্রদান করা সম্ভব নয়। কিন্তু একাডেমিক কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকরা পরিচালনা করে আসছে। প্রতিমাসে এসব শিক্ষক শিক্ষিকা কর্মচারীর বেতন প্রদান করতে হচ্ছে । তিনি বলেন জেদ্দার এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলে জানান।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ইংরেজি মাধ্যমের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন ২০১৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি দুই কোটি টাকা অনুদান না দিতেন তাদের এই শাখাটি আরো অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল।
এইজন্য জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের তৎকালীন কনসাল জেনারেল এফ এম বোরহান উদ্দিন এবং সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রবাসী এসব স্কুলগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা থেকে প্রতিটা স্কুল যেন কমপক্ষে ৬ মাস কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য প্রতিটা স্কুলকে ১৮ লক্ষ রিয়াল করে বিশেষ প্রণোদনা প্রদান করার জন্য দাবি জানান। বর্তমানে স্কুলের ফান্ড প্রায় শূন্যের কোঠায় এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা একান্তই প্রয়োজন।