মৃত্যুপথযাত্রীকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলতে পারে চিকিৎসকরা। সমাজে আর কোনো পেশার মানুষ এই কাজটি করতে পারেন না। সারাবিশ্বের মানুষ যখন করোনার ভয়ে গৃহবন্দি হয়ে পড়ছে, তখন দিনের পর দিন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মীরা করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সেবা করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশেও চিকিৎসকরাই এখন ভরসা। কিন্তু দেশের সব চিকিৎসকদের সুরক্ষা পোশাক দিতে অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে কিন্তু এখনও সেটা সবার কাছে যায়নি। ফলে ডাক্তারদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
স্পেনে যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তার ১৪ শতাংশ মেডিক্যাল প্রফেশনাল। ইটালির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের রিপোর্ট অনুযায়ী, মোট আক্রান্তের ৯ শতাংশ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। ভীতিকর হারে আক্রান্ত হওয়ার পরও তারা দিন রাত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত সেবাদানের মানসিকতা, মানুষকে জীবিত রাখার প্রাণান্তকর প্রয়াসের মাধ্যমে তারা পেশাটিকে এক ভিন্ন মর্যাদার স্থানে উন্নীত করেছেন।
দেশব্যাপী করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবার জন্য পৃথক কোনো ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। যার প্রয়োজন এখন সব্বোর্চ। প্রতিটি কমিউনিটি হাসপাতালকে এই ভাইরাসের চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা এখন সময়ের অনিবার্য দাবি। যদিও দিনের পর দিন এই দেশের সমাজে ডাক্তারদের প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণা গড়ে উঠেছে। এটার জন্য তাদের পেশাদরিত্বও দায়ী। ডাক্তারি পেশাকে মানবতার সেবার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেয়ে তাদের বাণিজ্যিক প্রবণতা এই নেতিবাচকতা সৃষ্টি করেছে সমাজে। তারপরও ডাক্তাররাই শেষ ভরসা। তারা প্রতিদিন শত শত মানুষের মৃত্যু দেখছেন। তাদের মনের উপর কতটা চাপ পড়ছে, সহজেই অনুমেয়। কিন্তু এই অবস্থাতেও তারা শুধু নিজেদেরই নয় সাধারণ মানুষকেও ভরসা যোগাচ্ছেন।
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী রুখতে সামনে থেকে যারা আজ যুদ্ধ করছেন, তাদের যেন আমরা কখনও অপমান না করি। মানুষের চরম বিপদের মুহূর্তে, দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে তারাই আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। তাদের উপযুক্ত সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে আমরা যেন সদা সচেষ্ট থাকি। মুমূর্ষুকে বাঁচিয়ে তোলা, রোগীকে সম্মান করার মাধ্যমে ডাক্তাররাও যেন নিজেদের অনন্য করে তোলার ক্ষেত্রে বিচ্যূত না হন, করোনাকালে এটাও আমাদের প্রত্যাশা।