করোনা শনাক্তের ৫০তম দিন পার করলো বাংলাদেশ। সংক্রমণের ৫০তম দিনে চীন-ইতালি-স্পেন-যুক্তরাজ্যের চেয়ে ভালো হলেও যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের চেয়ে খারাপ অবস্থা বাংলাদেশের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে আক্রান্তদের একটি বড় অংশ চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ এবং বিভিন্ন জরুরি সেবাকর্মী। করোনা পরিস্থিতিতে জনগণের কল্যাণে সেবার বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখতে পুলিশের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে জানায়, দেশে করোনা শনাক্তের ৫০তম দিনে মোট আক্রান্ত সাড়ে ৫ হাজার ৪১৬ মোট মৃত্যু ১৪৫, সুস্থ ১২২। রোববার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত ৪১৮ এবং মৃত্যু ৫ জনের এবং সুস্থ হয়েছেন ৯ জন। তবে বিশ্লেষণ বলছে, এ সময়ে চীন-ইতালি-স্পেন-যুক্তরাজ্যের চেয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনেক ভালো হলেও যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের চেয়ে অনেক খারাপ।
বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। সে হিসেবে ৫০তম দিনে মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৪১৬ জন, আর মোট মৃত্যু ১৪৫। চীনে ৫০ দিনের মাথায় আক্রান্ত ছিল ৭৪ হাজার ৫৭৬ জন, মৃত্যু ২ হাজার ১১৮।
পঞ্চাশতম দিনে ইটালিতে মোট আক্রান্ত ছিল ৫৩ হাজার ৫৭৮, মৃত্যু ছিল ৪ হাজার ৮২৫ জনের। স্পেনে ৫০ দিনে ২৫ হাজার ৪৯৬ আক্রান্ত ছিল আর মৃত্যু সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৮১।
যুক্তরাজ্যে ৫০তম দিনে মোট আক্রান্ত ছিল ৫ হাজার ১৮ জন, আর সেসময়ে ২৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
শনাক্তের অর্ধশত দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছিল মাত্র ২২১ জন, আর মুত্যু ছিল ১২ জনের।
পাশের দেশ ভারতে এই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৪৯, মৃত্যু ৫। শনাক্তের ৫০তম দিনে বাংলাদেশে আক্রান্ত এবং মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের চেয়ে বেশী। যুক্তরাজ্যের চেয়ে আক্রান্ত সংখ্যা একটু বেশি হলেও মৃত্যু সংখ্যা কম। তবে, চীন-ইতালি-স্পেনের চেয়ে সবদিক থেকেই বাংলাদেশের অবস্থা ভালো।
নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে আরও জানানো হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ৪টি হট লাইনে করোনা সংক্রান্ত কল এসেছে ৭৭ হাজার ৯০১ টি। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬৮০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৭৬ জনের। তাদের মধ্যে সংক্রমণ পাওয়া গেছে ৪১৮ জনের দেহে। এসময় মারা গেছেন ৫ জন, তবে সুস্থ হয়েছেন ৯ জন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে মোট সুস্থ হওয়া সংখ্যা ১২২।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও দুজন নারী। চারজন রাজধানীর এবং একজন ঢাকার দোহারের বাসিন্দা। এদের মধ্যে ১০ বছরের কম বয়সী এক শিশুও রয়েছে। এ শিশুটি কিডনিজনিত সমস্যায় (নেফ্রোটিক সিনড্রোম) ভুগছিল। এরই মধ্যে তার করোনা পজিটিভ আসে। বাকিদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব একজন এবং পঞ্চাশোর্ধ্ব তিনজন।
করোনাভাইরাসে ৫০ দিনে বাংলাদেশে মোট মৃত্যু ১৪৫। হোম এবং প্রাতিষ্ঠানিক মিলে কোয়ারেনটাইনে আছেন ৭৯ হাজার ৮শ ৯৯ জন, আইসোলেশনে ১ হাজার ১শ ৬৫।
প্রফেসর ডা. নাসিমা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, আক্রান্তদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ চিকিৎসক, পুলিশ এবং জরুরি সেবাকর্মী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোনো পরিসংখ্যান না জানালেও চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টর’স সেফটি, রাইটস এন্ড রেসপনসিবিলিটি জানিয়েছে, আক্রান্ত চিকিৎসকের সংখ্যা ৩৭১।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, রোববার পর্যন্ত সারাদেশে কোভিড ১৯ শনাক্ত চিকিৎসকের সংখ্যা ৩৭১ জন । এরমধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত চিকিৎসক ঢাকা বিভাগে।
তিনি বলেন, আক্রান্ত চিকিৎসকদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৩০৫ জন, চিকিৎসক, বরিশাল বিভাগের ৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৫ জন, সিলেট বিভাগের ৫ জন, খুলনা বিভাগের ১০ জন, রংপুর বিভাগের ৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের ২৪ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। তবে রাজশাহী বিভাগের কোনো চিকিৎসকের দেহে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি।
পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২৯৭ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ১৫০ জন ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের।
রোববার বিকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ পুলিশ সদরদপ্তর থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সকল পুলিশ ইউনিটের কমান্ডারগণের সাথে মতবিনিময় করে বলেন, করোনাকালে যে অকুণ্ঠ ভালবাসা ও প্রশংসা পুলিশ পাচ্ছে তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মানুষের কল্যাণে পুলিশের কাজ করে যেতে হবে।
পাশাপাশি করোনার বিস্তার রোধে লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করতে পুলিশের কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন।
বেনজীর আহমেদ বলেন, করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদেরকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালসহ পুলিশের অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে করোনা সংক্রান্ত চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া, বিভাগীয় পর্যায়েও নেয়া হয়েছে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা। পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের পাশে বাংলাদেশ পুলিশ রয়েছে।
এরআগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের কাছে করোনা সংক্রমণ রোধে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুরক্ষা সামগ্রী দেন মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশে করোনা পরীক্ষার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, রোববার চালু হওয়া দিনাজপুরের এম আব্দুর রহীম সরকারি মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবরেটরিতে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, নীলফামারী এবং দিনাজপুর জেলার সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষা করা হবে।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে এখন পর্যন্ত ২৯ লাখ ৪২ হাজার ৫৭৬ জন।এদের মধ্যে মারা গেছেন ২ লাখ ৩ হাজার ৮৮৫ জন। তবে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৮ ৪২ হাজার ২৯৪ জন মানুষ।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরে এ ছুটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর এ ছুটির মেয়াদ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়, পরে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে চলমান সাধারণ ছুটি আরও ১০ দিন বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত করেছে সরকার। এ সময়ে দেশবাসীকে নিজ বাড়িতে থাকার আহ্বান জানানো হয়।
ছুটির সময়ে অফিস-আদালত থেকে গণপরিবহন, সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, জরুরি সেবা এই বন্ধের বাইরে থাকছে। জনগণকে ঘরে রাখার জন্য মোতায়েন রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীও।