গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত যে ৩১২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগই রাজধানী ঢাকার ও নারায়ণগঞ্জের। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার (৪৪ শতাংশ) ও নারায়ণগঞ্জের (৩১ শতাংশ) বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত রাজধানীর পুরান ঢাকা ও মিরপুর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
রোববার মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটির একটি ভবনের ফ্ল্যাটে তিনজন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন, সেখানকার একটি ১৬ তলা ভবন লকডাউন করা হয়েছে। এছাড়াও মোহাম্মদপুরের রাজিয়া সুলতানা রোডের পর নূরজাহান রোডও লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
রোববার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত যে ৩১২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন তাদের শতকরা ৭৫ ভাগই রাজধানী ঢাকার (৪৪ শতাংশ) ও নারায়ণগঞ্জের (৩১ শতাংশ) বাসিন্দা। অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকার। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ ভাগ পুরুষ ও মহিলা ৩৪ ভাগ। মৃত্যুবরণকারী ৭ জনের সবাই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের রোগী। তাদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও দুজন নারী। তিনজন ঢাকার বেররের এবং চারজন নারায়ণগঞ্জের।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ২ হাজার ৭৪৯টি নমুনা সংগ্রহ ও ২ হাজার ৬২৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫২ জনকে আইসোলেশনে নেয়া হয়। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ৬৩৯ জন। আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়েছেন ২৫ জন। এ পর্যন্ত মোট আইসোলেশন মুক্ত হয়েছেন ৫৩৭ জন।
হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে আরও তিন হাজার ৬৪১ জনকে এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ১৭৪ জনকে। সবমিলিয়ে তিন হাজার ৮১৫ জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়। এই সময়ে কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্ত হয়েছেন চার হাজার ২৬ জন।
রাজধানীতে অধিকতর আক্রান্ত এলাকা
আইইডিসিআর জানায় গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত শনাক্তের ৩১২ জনের মধ্যে রাজধানী ঢাকার ১৩৭ জন, নারায়ণগঞ্জের ৯৭ জন এবং ৭৮ জন অন্যান্য জেলার।
গতকাল পর্যন্ত আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী আক্রান্তদের মধ্যে রাজধানীর মিরপুরে ৫০ জন, মোহাম্মদপুরে ৩৪ জন, ওয়ারীতে ২৮ জন, মিটফোর্ডে ২৬ জন, যাত্রাবাড়িতে ২৫ জন, লালবাগ ও উত্তরায় ২৩ জন, ধানমন্ডিতে ২১ জন, টোলারবাগে ১৯ জন, বাসাবোতে ১৭ জন, বংশালে ১৬ জন, গেন্ডারিয়া ও তেজগাঁওয়ে ১৬ জন, আজিমপুরে ১৩ জন, বাবুবাজারে ১১ জন, চকবাজারে ১২ জন , শাখারিবাজারে ১০ জন, হাজারীবাগে ১৬ জন, গুলশানে ১৪ জন, মগবাজারে ১১ জন, মহাখালীতে ১২ জন, রাজারবাগে ১৩ জন, গ্রীন রোডে ১০ জন।
ঝুঁকিপূর্ণ পুরান ঢাকা ও মিরপুর
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পুরান ঢাকা ও মিরপুরকে শনাক্ত করা হয়েছে। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, সংক্রমণ এড়াতে পুরান ঢাকায় এরই মধ্যে তিন শতাধিক বাড়ি ও গলি লকডাউন করা হয়েছে। মানুষকে বুঝিয়ে ঘরে ঢোকানো হচ্ছে। কিন্তু একটু পর তারা আবার বেরিয়ে আসে।
জানা যায়,পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাটে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। নিম্ন আয়ের লোকজনকে কোনোভাবেই বোঝানো যাচ্ছে না। মাইকিং করে তাদের নানা নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। মানছে খুব কম মানুষ। এসব এলাকার ছোট্ট ঝুপড়িঘরে ১৫ জন পর্যন্ত বাস করে। এই গরমের মধ্যে সারাদিন ঘরে থাকাও কষ্টকর। কিন্তু তারা যেভাবে রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেটি আরও বিপদের কারণ। এদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় খুবই কষ্টকর।
মিরপুর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিভিন্ন দোকানপাট বন্ধ থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দারা নানা কারণে রাস্তাঘাটে ঘোরাফেরা করছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কাছেও মাথাব্যথার বড় কারণ পুরান ঢাকা ও মিরপুর। এসব এলাকায় করোনা সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করাসহ নতুন পরিকল্পনা নেওয়ার কথা ভাবছে আইইডিসিআর।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে এখন পর্যন্ত সাড়ে ২৩ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার ৮৯৬ জন। তবে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ছয় লাখের বেশি মানুষ।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরে এ ছুটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। রোববার এ ছুটির মেয়াদ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে পরে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। দেশবাসীকে নিজ বাড়িতে থাকার আহ্বান জানানো হয়।
ছুটির সময়ে অফিস-আদালত থেকে গণপরিবহন, সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, জরুরি সেবা এই বন্ধের বাইরে থাকছে। জনগণকে ঘরে রাখার জন্য মোতায়েন রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীও।