চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

করোনাভাইরাস: ইরানের গোপন তথ্য ফাঁস

চীনের বাইরে শুরুতে ইরানই ছিলো বিশ্ব মহামারী করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের দেশ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও সর্বাধিক আক্রান্তের দেশ ইরান। প্রতিদিনই মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা গুণছে ইরান সরকার। কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে সেই শুরু থেকে। স্বয়ং ইরানি নাগরিক ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক স্বাস্থ্যকর্মীর পক্ষ থেকেই এমন অভিযোগ আসে- যা নিয়ে বিবিসি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় মার্চের দিকে।

যদিও ইরান সরকার এমন অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে এবং তা ইরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করে এসেছে।

তবে এবার বিবিসির ইরান প্রতিনিধির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে গোপন করা তথ্য ফাঁসের সত্যতা সামনে  এসেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাসের শুরু থেকে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা গোপন করেছে ইরান এবং তা ইরানের দাবি করা তথ্যের তুলনায় প্রায় তিনগুণ।

ইরান সরকারের রেকর্ডগুলো অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ২০ জুলাই পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে প্রায় ৪২ হাজার লোক মারা গেছে। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিদিনকার প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, মৃতের সংখ্যা ১৪ হাজার ৪০৫ জন।

আক্রান্তের হিসাবেও এমন গড়মিল পাওয়া গেছে, যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত পরিসংখ্যানের তুলনায় সরকারের রেকর্ড করা গোপন সংখ্যাটি প্রায় দ্বিগুণ বেশি।

২০ জুলাই পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করেছে ২ লাখ ৭১ হাজার ২৭ জন। কিন্তু সরকারের গোপন করা রেকর্ডে আছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ২৪১ জন।

বিবিসি বলছে, ইরানের মেডিকেল স্বাস্থ্যের রেকর্ড অনুযায়ী ইরানে কোভিড-১৯ প্রথম মৃত্যুর রেকর্ড করা হয় ২২ জানুয়ারি, যা ছিলো দেশটির অফিসিয়াল কেস প্রতিবেদন আকারে প্রকাশের প্রায় এক মাস আগের ঘটনা।
ইরানের এমন তথ্য গোপনের ব্যাপারে অনেক পর্যবেক্ষক সরকারী সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছেন। জাতীয় ও আঞ্চলিক স্তরের তথ্যগুলোতে অনিয়ম হয়েছে।

যদিও  টেস্টিং কিটের সংকটের কারণে টেস্ট কম হয়েছে বলে একধরনের বক্তব্য আসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ  থেকে।

কিন্তু বিবিসির প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, সরকারের কাছে সকল আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড থাকার পরও দৈনিক প্রকাশিত সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ডাক্তার বিবিসির কাছে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে।

সূত্রটি বলছে, তারা সত্য প্রকাশ করতে এবং মহামারি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক খেলা শেষ করতেই বিবিসির কাছে এই তথ্য দিয়েছেন।

তবে এই সূত্রটি ইরানী সরকারী সংস্থার পক্ষে কাজ করে কিনা বা তারা কীভাবে এই তথ্য পেয়েছিলো সেটি নিশ্চিত করতে পারেনি বিবিসি।

কিন্তু তথ্যের বিবিরণ থেকে বিবিসি কিছু জীবিত ও মৃত রোগীর গরমিল পেয়েছে।

এই তথ্যের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ধারণা রাখা চিকিৎসকরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশটির  গোয়েন্দা সংস্থার চাপে ছিলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন চিকিৎসক বলেছেন, প্রথম দিকে তাদের কাছে টেস্টিং কিট ছিলো না এবং পরে কিট পেলে সেগুলোও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে পারেনি। দেশের সুরক্ষা ও গোয়েন্দা সংস্থার কারণে করোনাভাইরাসের প্রকৃত অবস্থা প্রকাশের মতো অবস্থা ছিলো না।

ইরান সরকার কেন করোনাভাইরাসের সঠিক তথ্য প্রকাশ করেনি সে কারণও ওঠে আসে বিবিসিতে।

মূলত ১৯৭৯ সালের ইরানের ইসলামিক বিপ্লব দিবস এবং দেশটির সংসদ নির্বাচনের সময়ের সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব সূচনার সময় মিলে যাওয়ার কারণে এমন গোপন করা হতে পারে বলছে বিবিসি।

মূলত নির্বাচনের সময় ও জাতীয় দিবসে মানুষের সমর্থন রক্ষার্থে এটা করা হতে পারে।