করোনাকালীন নানা সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সক্ষমতায় ফিরেছে দেশের বেশির ভাগ তৈরী পোশাক শিল্পের কারখানা। এটা দেশের অর্থনীতির জন্য যেমন সুসংবাদ, তেমনি আরও একটি দারুণ সংবাদ হলো পণ্য রপ্তানিতে আসতে শুরু করেছে বিদেশি ক্রয়াদেশ।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে গত মার্চে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশ আসতে থাকে। দেশেও ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর মাসখানেক পোশাক কারখানা বন্ধ থাকে। তাতে এপ্রিলে মাত্র ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। পরের মাসে রপ্তানি হয় ১২৩ কোটি ডলারের পোশাক। জুনে সেটি বেড়ে ২২৫ কোটি ডলার হয়। সব মিলিয়ে গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৯৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা তার আগের বছরের চেয়ে ৬১৮ কোটি ডলার কম।
বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, করোনায় ৩১৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ প্রাথমিকভাবে বাতিল ও স্থগিত হয়েছিল। তার মধ্যে প্রাইমার্ক ৩৩ কোটি, ইন্ডিটেক্স ৮ কোটি ৭০ লাখ, বেস্টসেলার ৮ কোটি ৩০ লাখ, মাদারকেয়ার ৫ কোটি ৬০ লাখ, কোহলস ৫ কোটি ৪০ লাখ, গ্যাপ ৩ কোটি ৮০ লাখ, জেসি পেনি সাড়ে ৩ কোটি, ওয়ালমার্ট ১ কোটি ৯০ লাখ, ডেবেনহাম ১ কোটি ৮০ লাখ এবং রালফ লরেন ১ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করে। তবে এই হিসাবটিও চূড়ান্ত নয় বলে জানা গেছে।
এতে সাত মাস পর রপ্তানিতে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি মাসের প্রথম থেকেই শুরু হয়েছে পোশাক রপ্তানি। ঈদের পরের দিনই ১ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের রপ্তানি হয়।
পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, চলতি মাসের দ্বিতীয় দিনের পর থেকেই ধীরে ধীরে রপ্তানি বাড়ছে। সর্বোচ্চ ২০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয় ১৩ আগস্ট। গেল ২২ আগস্ট হয়েছে সাড়ে ৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি।
করোনাকালিন পরিস্থিতি বিবেচনায় পোশাক রপ্তানি নিয়ে আশঙ্কা থাকলেও তা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। মূলত ইউরোপের বাজারে স্বাভাবিকতা ফিরে আসায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প। নতুন ক্রয়াদেশ ছাড়াও করোনার কারণে আটকে যাওয়া পুরনো ক্রয়াদেশের পণ্যও রপ্তানি হচ্ছে।
করোনার কারণে সব ক্ষেত্রই বিপর্যস্ত। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সবাই কঠোর পরিশ্রম করছেন। তৈরী পোশাক শিল্পে ক্রয়াদেশও আসতে শুরু করেছে। এটা যেমন শুভ সংকেত, তেমনি এই সময়ে শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের আরো সংবেদনশীল হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে মনে করছি আমরা। কারণ ক্রয়াদেশ নেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা যদি পণ্যের মূল্য নিয়ে নিজেরাই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে যান, তাহলে হিতে বিপরীত ঘটতে পারে।