চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘কমিটি ভাঙার নির্দেশ’ প্রসঙ্গে যা বললেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক

শনিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এক বৈঠকে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি নিয়ে আলোচনার পরে ‘ছাত্রলীগের কমিটি ভাঙার নির্দেশ’ বলে সংবাদ প্রকাশ পায়, বিষয়টিকে সম্পূর্ণ গুজব এবং এধরনের কথা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতাও বলেছেন, কমিটি ভাঙার মতো কোনো নির্দেশনা আসেনি।

চ্যানেল আই অনলাইনে-র সঙ্গে এ বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচন এবং কয়েকটি উপজেলার প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে শনিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এক বৈঠকে ছাত্রলীগের প্রসঙ্গ উঠে আসে। ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে।

গোলাম রাব্বানী

অভিযোগ সর্ম্পকে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, গণভবনের বৈঠকে যে অভিযোগগুলো করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। যারা আমাদের উপর অসন্তুষ্ট, তারাই মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমরা এমন কোনো কাজ করি নাই, যাতে কমিটি ভেঙে দেয়া হবে। যেহেতু নেত্রী (শেখ হাসিনা) নিজে কমিটি করে দিয়েছেন, তাই আমাদের নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের শিকার।

রাব্বানী আরও বলেন, এটা নেত্রীর পছন্দের কমিটি। এই কমিটি ভণ্ডুল করতে চায় অনেকে। অনেকজনের চক্ষুশূল হয়ে গেছি। তার ডিসিশনের বাইরে আমরা কখনোই কমিটিতে কাউকে স্থান দেইনি। সংগঠনের পক্ষে যারা ভালো যোগ্য, তাদেরকেই রাখা হয়েছে কমিটিতে। ভবিষ্যতেও ছাত্রলীগে যারা যোগ্য তাদেরকেই স্থান দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে কমিটি অনেকেরই মনমতো হবে না।

আমাদেরও কিছু ভুল আছে স্বীকার করে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন: ‘নেত্রীর কাছে আমাদের নামে যে অভিযোগগুলো গেছে বলে শুনেছি, তার বেশিরভাগই মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাদের নামে অভিযোগ করা হয়েছে, কিছুদিন আগে পার্টি অফিসে আমরা ময়লা ফেলে এসেছি। কিন্তু আমরা যখন সেই স্থান ত্যাগ করি সেখানে কোনো ময়লাই ছিল না। পরবর্তীতে আমরা সেখান থেকে চলে আসার পর সেখানে ময়লা ফেলে ছবি তুলে নেত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এমন কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিযোগ তার কাছে করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি তার সাথে কথা বললেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে ছাত্রলীগ নেতাদের জন্য, ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির পৌঁছানোর পরে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুষ্ঠানে যাওয়া এবং সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদকে প্রধান অতিথি করে আয়োজন করা ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে একই ধরণের আরেকটি ঘটনার কথা গণভবনে আলোচিত হয়েছে বলে সভায় উপস্থিত সূত্রে জানা গেছে।

এসব অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় রাব্বানী বলেন: ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রোগ্রাম ছিলো ২০ জুলাই। নেত্রী ১৮ জুলাই দেশের বাইরে যাওয়ার আগে আমি তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মাদারীপুর যাই। ১৯ তারিখ আমার মায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো। সারারাত জার্নি করে পথসভা করে আমরা ঢাকায় ফিরি। সেদিন শেষ প্রোগ্রামটা হয়েছিলো সকাল ৯টায়। তারপর বাসায় ফিরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রোগ্রামে যেতে যানজটে পড়ে ৪০ মিনিট দেরি হয়েছিলো। কিন্তু সভায় আলোচিত হয়েছে, আমরা নাকি ৩ ঘণ্টা দেরি করে গিয়েছি। আসলে যানজটের কারণে বংশাল থেকে হেঁটে যেতে ৪০ মিনিট দেরিতে পৌঁছেছিলাম ওই প্রোগ্রামে।

বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এবং দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের এই শীর্ষ নেতা কারণ ব্যাখ্যা করেন।

দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার বিষয়ে রাব্বানী বলেন: ‘দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আমি সকালে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের কোন প্রোগ্রামে যাইনি বা ছিলাম না, সেটা দেখা উচিত। দায়িত্ব নেয়ার পরে তৃণমূল থেকে নেতা-কর্মীরা আমার কাছে আসতো। আমি মধ্যরাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত তাদের অভাব অভিযোগ সব শুনতাম। এ কারণে দেরি করে ঘুমোতে যাওয়ায় আমার প্রথমদিকে সকালে উঠতে কষ্ট হতো। তবে পরে আমি আর রাত না জেগে তাদেরকে দিনেই সময় দিয়ে তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করেছি।

তিনি আরও বলেন: আমরা অনৈতিক কাজ করেছি, এ ধরণের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেউ এ ধরনের কোনো তথ্য প্রমাণ দিতে পারবে না।

কমিটি ভাঙার সংবাদের বিষয়ে শনিবার গণভবনের বৈঠকে উপস্থিত একজন সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা ও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী নাম না প্রকাশ করার শর্তে চ্যানেল আই অনলাইন-কে বলেন: ‘ছাত্রলীগের কমিটি ভাঙার নির্দেশ’ ধরণের কোনো সরাসরি নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী দেননি। তবে তিনি অনেক রাগ করেছেন। অনেক ক্ষুব্ধ ছিলেন ছাত্রলীগ নেতাদের উপরে। এখন কাগজে কলমে কোনো নির্দেশনা না আসা পর্যন্ততো এভাবে বলার উপায় নেই।

বৈঠকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রংপুর-৩ এর উপ-নির্বাচন এবং কয়েকটি উপজেলার প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে আয়োজিত এ বৈঠকে ছাত্রলীগের প্রসঙ্গ উঠে আসে। ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে তাদের সময়নিষ্ঠা ও বেশ কিছু ইউনিটের কমিটি গঠন নিয়ে ব্যর্থতা ও অনিয়মের বিষয়টি আলোচনায় আসে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যের কথা উল্লেখ করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তখন বেশ কয়েকজন নেতাও বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেন।